‘আফনেরা সব বালা আছইননি’ বলেই সিলেটে বক্তৃতা শুরু করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে সিলেট চৌহাট্টা এলাকা থেকে এনসিপির নেতা–কর্মীরা পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে পথসভা শুরু হয়।
সভাপতির বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই সিলেট থেকেই ইসলামের সম্প্রীতি ও ইনসাফের বাণী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো। আমরা এসেছি বহু সংস্কৃতি ও বহু জাতির সিলেট অঞ্চলে। সিলেট ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক। সিলেট বাঙালির আত্মপরিচয়। দুর্নীতিমুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ভাইয়েরা রক্ত দিয়েছে, আপনার-আমার দায়িত্ব হচ্ছে সেই বাংলাদেশের জন্য কাজ করা। ১৭ জনেরও অধিক শহীদ রয়েছে এই সিলেট অঞ্চলে ও সিলেট জেলায়। আমরা সেই সব শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আজকে সিলেটে এসেছি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিচার, সংস্কার এবং নতুন বাংলাদেশের জন্য, নতুন সংবিধানের জন্য আমরা রাজপথে নেমেছি। সেই নতুন সংবিধানে আপনার-আমার অধিকারের কথা থাকবে। সিলেটের মানুষের মর্যাদার কথা থাকবে।’সিলেট কেবল প্রশাসনিক জেলা নয়, ইতিহাস ও সংস্কৃতির আলোকে আমাদের সিলেটে দেখতে হবে। যুগ যুগ ধরে এই সিলেট বাংলাদেশের ইতিহাস ধারণ করে আছে। বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আমাদের জুলাই অভ্যূত্থানে সিলেট লড়াই করেছে বুক চিতিয়ে। এদেশের মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে সিলেট ছিলো অগ্রগামী। এই বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট ছিলো অন্যতম কেন্দ্রভূমি।
দেশভগের সময় সিলেটে গণভোটের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা জানি, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের সময় মাওলানা ভাসানীর প্রচারণায় এই সিলেট অঞ্চলের মানুষ পূর্বভঙ্গের সাথে থাকার জন্য রায় দিয়েছিলো। কিন্তু তখন আমরা আমাদের পূর্ণ সিলেট পাইনি। করিমঞ্জেকে কেটে দেওয়া হয়েছিলো। আসামের সাথে সিলেটের বহু অংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই পূর্ববঙ্গকে ঠকানো হয়েছে সেই বৃটিশ আমল থেকে। পাকিস্তান আমলে এবং আওয়ামী লীগ আমলেও সিলেটকে ঠকানো হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বাংলাদেশকে যে বহু জাতিগোষ্টি ও বহু সংস্কৃতির দেশ হিসেবে গড়তে চাই সিলেট তার অন্যতম প্রতীক। সিলেটের শত ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদেরকে সিলেটি ভাষার মর্যাদা দিতে হবে। সিলেটকে আধুনিক শিল্পন্নোত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এনসিপি কোনো চাঁদাবাজের দল নয়। এনসিপি কোনো টেন্ডারবাজের দল নয়। এনসিপি উঠে এসেছে সংকট থেকে। সমস্যা সমাধান করে এনসিপি উঠে এসেছে। ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করে এনসিপি উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে এনসিপি উঠে এসেছে। আপনারা এনসিপির হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, পরবর্তী বাংলাদেশ জনগণের বাংলাদেশ করার জন্য।’
নতুনভাবে দেশে আবার ‘মুজিববাদের পাহারাদার’ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘এত দিন পর্যন্ত আমাদের দেশটা হয়েছে ধনিক শ্রেণির। আমাদের দেশটা হয়েছে বসুন্ধরার, আমাদের দেশটা হয়েছে প্রশাসনের, আমাদের দেশটা হয়েছে আর্মিদের। আমাদের দেশটা জনগণের হয়ে ওঠে নাই। আমরা আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এনসিপির নেতৃত্বে ক্ষমতা জনতার হাতেই আমরা ফিরিয়ে দেব।’
পথসভায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমাদের অনেকেই বলছে, আমরা অ্যান্টি-বিএনপি পলিটিকস করি। আমরা বিএনপির বিরোধী নই, আমরা খালেদা জিয়ার বিরোধী নই, আমরা তারেক জিয়ার বিরোধী নই, আমরা জিয়াউর রহমানের বিরোধী নই। তবে বাংলাদেশে আমরা চাঁদাবাজদের ঠাঁই দেব না, ঠাঁই দেব না। বাংলাদেশে আমরা কোনো সিন্ডিকেট ঠাঁই দেব না, ঠাঁই দেব না। বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসীদের আমরা ঠাঁই দেব না।’
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পথসভা সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হক, এনসিপির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল হুদা জুনেদ, সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন শাহান প্রমুখ।
কর্মসূচিতে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার, যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাশ এবং জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেলে এনসিপির নেতারা সুনামগঞ্জে পদযাত্রা ও সভায় অংশ নেন। সেখান থেকে সিলেটে ফেরার পথে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আসাদুল্লাহ আল গালিব।
আজ রাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন বলে এনসিপির স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।