ডায়াল সিলেট ডেকস

সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন প্রায় ১০ দিন ধরে বন্ধ। তীব্র তাপদাহের সময়ে সিলেটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। দিনে গড়ে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে নগরবাসীদের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

তাই সিলেটে এখন শুধু গ্রিড থেকে পাওয়ার আনা হচ্ছে। সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে নিজস্ব জেনারেশন সিলেটে আর নেই। তার উপর চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার (এনএলডিসি)। তাই সিলেটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে।

দ্রুত কুমারগাওয়ের ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন চালু না করলে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়বে সিলেট নগরীর বাসিন্দারা।

এদিকে পাওয়ার স্টেশন বন্ধের কারণ ও চালু হওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানেন না সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ও কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতরা।

একদিকে বিউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, কুমারগাওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ হয়েছে পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার কারণে। অপরদিকে বন্ধ হওয়া পাওয়ার স্টেশনের প্রধান প্রকৌশলীও অবসরে চলে গেছেন।

তবে তার দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান জানান, পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়নি তবে সমস্যা হয়েছে। এটা ঠিক করতে কতদিন লাগবে তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে সহকারী প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ আচার্যের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।

বিদ্যুৎ আচার্যের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কুমারগাওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। পাওয়ার স্টেশনে ওইরকম কোনো সমস্যা নেই।

কবে এই পাওয়ার স্টেশন চালু হবে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটাতো অন্য ডিপার্টমেন্টের, একটু জেনে জানাতে হবে। আজ (শুক্রবার) জানা যাবে না। কালকে জানা যাবে।’

বিউবো সূত্রে জানা যায়, সিলেট মহানগরীতে পাঁচটি ডিভিশনে ১৩টি সাবস্টেশন আছে। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে বর্তমানে সমস্যা বেশি হচ্ছে। ফিউজ ছিঁড়ে যাওয়া, তার ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উপর কুমারগাওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ। এই পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে প্রায় ১০দিন। এর পর থেকেই সিলেটে লোডশেডিং বেড়ে গেছে এবং ভোল্টেজও কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না সিলেটে।

বিউবো সিলেট বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন বলেন, ‘পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় আমাদের কিছু এলাকায় লোডশেডিং করতে হয়। তার উপর আবার ঢাকা থেকে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ। পুরো সিস্টেমে ফিকুয়েন্সি ডাউন হয়ে গেলে ঢাকা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই মানুষজন বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। অনেক গ্রাহক কল করে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করেন। কিন্তু এই লোডশেডিংয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। তারপরও গ্রাহকরা আমাদের উপরই ক্ষোভ ঝাড়েন।’

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ‘সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় কুমারগাও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। এই কুমারগাওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ। এই পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে প্রায় ১০দিন। এটা বন্ধ থাকার কারণে ভোল্টেজও কম হচ্ছে। এবং সিলেটের লোডশেডিংও বেড়ে গেছে। আমরা এখন গ্রিড থেকে পাওয়ার আনছি। আমাদের নিজস্ব জেনারেশন সিলেটে আর নেই। এটা চালু হলে সিলেটের লোডশেডিং কমবে। লো ভোল্টেজের সমস্যাও সমাধান হবে। ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে তাই বলা যাচ্ছে না কতদিনের ভেতর ঠিক হবে। কারণ এটার যন্ত্রপাতি বাইরে থেকে আনা হয়। তাছাড়া সিলেট চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি)। বৃহস্পতিবারেও প্রায় ৩৩ শতাংশ লোডশেডিং ছিল সিলেটে। এই লোডশেডিং কমাতে হলে আমাদের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হবে এবং কুমারগাওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন চাল করতে হবে। কিন্তু ওই পাওয়ার স্টেশন আমাদের আওতাধীন না। তাই সেটা কবে নাগাদ চালু হবে বলতে পারছি না।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *