বালু লোভীদের ছোবলে ধ্বংসের মুখে পড়া সিলেটের ধলাই সেতু রক্ষায় আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘অবিলম্বে বালুখেকোদের হাত থেকে ধলাই সেতু রক্ষার উদ্যোগ না নিলে এবং ধলাই সেতু ধ্বংস হলে এর দায় প্রশাসনের। প্রশাসনকে আসামি করে মামলা করা হবে।’
শনিবার(২৬ জুলাই) বিকেলে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট শাখা ও আন্তর্জাতিক পানি ও নদী বিষয়ক সংগঠন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার-এর উদ্যোগে এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী তীরবর্তী মানুষের অংশগ্রহণে ধলাই সেতুর পূর্বপাড়ে অনুষ্ঠিত এই কর্মসুচী থেকে বালু লুটতরাজ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করে দেয়া হয়। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ক্লাব সেতু রক্ষার দাবিতে ব্যানার-ফ্যাস্টুন সহ কর্মসুচীতে অংশগ্রহন করে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে ও স্থানীয় স্কুল শিক্ষক নিজাম উদ্দিন মাস্টারের সঞ্চালনায় সমাবেশ বক্তব্য দেন ধরা সিলেটের সংগঠক ও ধলাইতীরের বাসিন্দা ফয়জুর রহমান, ধরার সংগঠক ও আইনজীবী অরুপ শ্যাম বাপ্পী, সোহাগ তাজুল আমিন, নাট্যকর্মী আহমেদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩৪ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের ধলাই সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান সেতুটি উদ্বোধন করেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের সঙ্গে ভারত সীমান্তঘেঁষা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে ধলাই সেতু। সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা উতমাছড়ায় যাতায়াতের মাধ্যম এই সেতু। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের শিথিলতায় কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদে শুরু হয় নির্বিচারে বালু ও পাথর লুট। বালুখেকোরা প্রশাসনিক কোন বাঁধা না পাওয়ায় এতোই বেপরোয়া হয় যে, ধলাই সেতুর নিচ থেকে বালি উত্তোলন করা শুরু করে। বিগত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়েছে।
ব্ক্তারা বলেন, ইতিমধ্যে পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেট শাখার পক্ষ থেকে এই বালু লুটতরাজ বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। তবুও বন্ধ হয়নি বালুখেকোদের বেপরোয়া বালু উত্তোলন। এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে ধলাই সেতু যে কোন সময়ে ধ্বসে যেতে পারে। ফলে রাষ্ট্রিয় সম্পদ বিনষ্টের পাশাপাশি ঐ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটবে।
সমাবেশে সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম বলেন, ধলাই নদীর সাথে বিগত এক বছর ধরে নজিরবিহীন অন্যায়-অনাচার চলছে। এখানে আইন-কানুনের কোন তোয়াক্কা নেই। বালু-পাথর লুট করতে করতে পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, নিজের পায়ে কুড়াল মেরে ধলাই সেতু ধ্বসের আয়োজন চলছে। অবিলম্বে বালু খেকোদের হাত থেকে ধলাই সেতু রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া না হলে, সেতু ধ্বংসের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে রাষ্ট্রিয় সম্পদ রক্ষা করতে ব্যর্থতার জন্য আসামী করে মামলা দায়ের করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ধলাই সেতুর নিচে বালু লুটতরাজ বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০), বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০, পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০০০, ফৌজদারি দণ্ডবিধি ১৮৬০, সন্ত্রাসবিরোধী আইন বা বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের দাবি জানান।