ডায়াল সিলেট ডেকস

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে প্রাণ হারায় সিলেটের একাধিক জন। এদের মধ্যে রাষ্ট্রীয় শহীদের মর্যাদা দেয়া হয় ১৪ জনকে। এ সংক্রান্ত গেজেটও মন্ত্রনালয় থেকে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বা আয়োজনে দায়িত্বশীলরা যেন ভুলে যান গত জুলাই বিপ্লবে নিজের প্রাণ উৎস্বর্গ করা বীর শহীদদের । যার ফলে ঘরের মাঠিতে অর্থাৎ সিলেটে নিজেদের জেলায় যখন প্রশাসন কোন আয়োজন করে তখন অন্যান্য জেলার শহীদের স্মৃতি চিহ্ন তাদের আয়োজনে স্থান পেলেও স্থান পায় না সিলেটের শহীদদের নাম, ছবি বা স্মৃতি চিহ্ন। এছাড়াও সিলেটের প্রথম শহীদ শাবিপ্রবি ছাত্র রুদ্র সেনের কোন ছবি বা স্মৃতি স্থান পায়নি জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোরে প্রদর্শিত ব্যানার এবং ফেস্টুনে।
এবারও নিজজেলায় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীতে উপেক্ষিত রাষ্ট্র স্বীকৃত গেজেটেড সিলেটের শহীদরা। শুধুযে এইবার প্রথম তা নয়। গেল বছর সিলেট আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামে শহীদ আবু সাঈদের নামে গ্রান্ড স্ট্যান্ড করা হয় যা সিলেট বাসিকে হতাশ করে। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সিলেটে এ নিয়ে বিক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় ওঠলে শুধুমাত্র শহীদ আবু তুরাবের নামে একটি স্ট্যান্ডের নামকরণ করা হয়। যা অন্যান্য শহীদ পরিবারকে হতাশ করে। অন্যান্য শহীদদের নামেও সিলেট আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে কর্ণার বা স্ট্যান্ডে সম্মিলিত শহীদের নামে নামকরণের লক্ষ্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়াও শহীদদের স্মৃতির সংরক্ষণের জন্য তাদের নামে সম্মিলিত একটি শহীদ স্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত সেদিকে কোন দৃষ্টি দেয়া হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা নিয়ে প্রতিটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে শহীদ পরিবারের সদস্যদেরকে। সবকিছু ছাপিয়ে যখন জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি সকলের কাছে পৌছে দেয়ার আয়োজন করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে । সেখানেও যেন বৈষম্য কোন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সিলেটের শহীদদের। যার বাস্তব উদাহারণ স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোর প্রদর্শণীতে । গুরুত্বপূর্ণ এই আয়োজনেও উপেক্ষিত হয়েছেন সিলেটের শহীদ ১৪ জন। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুরো শহর যেখানে আলোকসজ্জা ও জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়ালের ছবি ব্যানার ও ফেস্টুনে সয়লাব । সেখানে বুলেটের সামনে বুক পেতে দেয়া শহীদদেও একজনেরও ছবি বা স্মৃতি চিহ্ন স্থান পায় নি। যা নিয়ে সিলেটে বইছে সমালোচনার ঝড় । কেউ কেউ প্রশাসনের এমন উদাসীপনা ও অবহেলাকে দেখছেন অজ্ঞতা ও অবহেলা হিসেবে। আমরা শহীদ পরিবারের অন্যতম সমন্বয়ক আল-হাদী বলেন, বরাবর শহীদদের প্রতি এমন অবমাননা শহীদদের প্রতি অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া যারা দায়িত্বপালন করছেন আমার কাছে মনে হয়না তারা জুলাই বিপ্লবেন স্পিরিটকে ধারন করতে পারছেন না। না হলে এমন ধৃষ্টতা তার দেখাতে পারতেন না।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনায় ৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জেলাপ্রশাসন, জেলাপরিষদ ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ বাস্তবায়নে জুলাই ভিজ্যুয়াল করিডোর প্রদর্শণী চলছে সিলেটে। ৩০ জুলাই এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা উদ্বোধন করার সময় পর্যন্ত বের করতে পারেন নি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার । তাই আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখনো শুরু হয়েছে বলা যাচ্ছেনা । যদিও ইতোমধ্যে সিলেট নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট , গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সহ একাধিক স্থানে আলোকসজ্জা এবং ব্যানার ফেস্টুন সাটানো হয়েছে। সাটানো ্ওই সব ব্যানার ও ফেস্টুনের একটিতেও সিলেটের কোন শহীদের ছবি স্থান পায়নি দেশের অন্যান্য শহরের শহীদদের ছবি স্থান পেলেও স্থানীয়দের কোন ছবি না থাকায় সামাজিক মাধ্যম ও সিলেটে এ নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। প্রশাসনের আয়োজনে সিলেটের কোনো শহীদের স্মৃতি বা ছবি না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করে আলী হায়দার সিদ্দিকী নামে একজন তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন প্রতিবার কেনো স্মরণ করাতে হবে আপনাদের । কেন বারবার কানে ডুকাতে হবে একই কথা।এই অবহেলা আর সহ্য নয়। এছাড়াও মো.আজমল আলী, রেজা রুবেল, হুমায়ুন কবির লিটন , ফয়ছল আহমদ বাবলু , নাজমুল কবির পাবেল, সহ একাধিক গণমাধ্যমকর্মী তাদের ফেসবুক পেজে প্রশাসনের এমন দায়িত্বহীন কর্মকান্ডে চরম হতাশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস জার্নালিস্ট কমিশনের সভাপতি ফয়ছল আহমেদ বাবলু বলেন, সিলেটের অনেক সন্তান বিগত জুলাই বিপ্লবে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে বন্দুকের নলের সামনে। বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্টা করতে যারা এমন আত্মত্যাগ করেছে তাদের কে বাদ দিয়ে এমন প্রদর্শণী তাদের প্রতি নিশ্চিত বৈষম্যছাড়া আর কিছুই নয়। এমন আয়োজনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ব্যারিষ্টার নুরুল হুদা জুনেদ বলেন, বারবার সিলেটের শহীদরা এভাবে বিভিন্ন উপস্থাপনায় উপেক্ষিত হচ্ছেন যা সত্যিই খুব উদ্যেগের। সিলেটের সব স্থানে শহীদদের প্রদর্শণী আরো অধীক হওয়া উচিৎ ছিল। আমি আশা করবো শুধু প্রশাসন নয় ,সকল পর্যায়ের আয়োজনে সিলেটের সকল শহীদের স্মৃতিকে সম্মান জানানো।
শহীদ মিনহাজের বড় ভাই ও আমরা শহীদ পরিবার সিলেটের আহবায়ক মো. সাঈদ আলম বলেন, বিগত দিন থেকে দেখে আসছি বারবার বিভিন্ন আয়োজনে সিলেটের সকল শহীদের প্রতি বৈষম্য প্রদশর্ণ করা হচ্ছে। বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে গিয়ে আমার ভাইয়েরা তাদের জীবন দিয়েছিল ।কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা বৈষম্যর শিকার হচ্ছি। প্রশাসন যদি শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মাণ প্রদর্শণ করতে ব্যর্থ হয়, আমরা সিলেটের সকল শহীদ পরিবার প্রশাসনের সকল অনুষ্ঠান বয়কট করতে বাধ্য হবো। আমাদের দাবি সকল শহীদদের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করা হোক।
অতিরিক্ত বিভগীয় কমিশনার ও জেলা পরিষদের প্রশাসক দেবজিৎ সিনহা বলেন, কিছু দিন আগে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্যে সিলেটে একটি আইডিয়া প্রতিযোগীতা হয়। সেখান থেকে দুটো আইডিয়া গ্রহণ করা হয় । একটি জুলাই ভিজ্যুয়াল করিডোর এবং আরেকটি আলোকচিত্রী প্রদশণী।সেই মোতাবেক আইডিয়া মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হলে , মন্ত্রনালয় সেই মোতাবেক নির্দেশনা দেয়। তবে সিলেটের মাঠিতে এমন আয়োজনে সিলেটের কোন শহীদের স্মৃতি না থাকাটা মেনে নেয়া যায়না। আমরা ভবিষ্যতে চেষ্টা করবো যেন সিলেটের কোন শহীদ কোন আয়োজনে বাদ না পড়ে।
জেলা প্রশাসক শের মো. মাহবুব মুরাদ বলেন,জুলাই বিপ্লব ভিজ্যুয়াল করিডোরের প্রদর্শণীতে সিলেটের শহীদদের ছবি বা স্মৃতি না থাকাটা দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত । সিলেটের সকল শহীদের ছবি অন্তর্ভুক্ত করতে জেলা পরিষদ কে ইতোমধ্যে অবগত করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকারের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *