ডায়াল সিলেট ডেকস

পাকিস্তানি উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসছেন। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের একজন কূটনীতিকের মতে, এপ্রিল মাসে যে সফরটি স্থগিত করা হয়েছিল, সেটি এখন অনুষ্ঠিত হবে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় পক্ষই এই সফরের বিষয়ে একমত হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের দেড় দশকের শীতল সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে গত এপ্রিলে ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। এরই ধারাবাহিকতায় ইসহাক দার তাঁর সফরে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

ঢাকা সফরের সময় ইসহাক দার বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে।

এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ইসহাক দারের ঢাকায় আসার কথা ছিল। কিন্তু সেসময় ভারতের পেহেলগামে একটি সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় তার সফর স্থগিত করা হয়।

বাংলাদেশের কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অমীমাংসিত বিষয়গুলো ঢাকা ভুলে যায়নি।দুই দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যে এ বিষয়ে সম্মতি হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সফরটি ২২ বা ২৩ আগস্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে, এবং এতে কয়েকটি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

সফরকালে ইসহাক দারের মূল বৈঠক হবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। পাশাপাশি তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে ইসহাক দারের সঙ্গে তৌহিদ হোসেনের সাম্প্রতিক সাক্ষাতেও এই সফর নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে দার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সহজকরণ এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, প্রধান উপদেষ্টা যখন অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়গুলো ফয়সালার কথা বলছেন, তখন এগুলোকে বাদ দিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে জেইসিসহ বিভিন্ন খাতের বৈঠকে অংশ নিতে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অনীহা নেই। কিন্তু কিছুটা ধীরে এগোনোই সমীচীন।

২০১০ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল ইসলামাবাদে। সেই বৈঠকের পরও একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ তিন অমীমাংসিত ইস্যুর কথা পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছিল। অবশ্য বাংলাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে প্রসঙ্গগুলোর উল্লেখ ছিল। ২০১০ সালেও পাকিস্তান অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছিল।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। এমনকি ইসহাক দারের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের শীর্ষ কিছু ব্যবসায়ীর আসার কথা রয়েছে।

ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গত ১৪ জানুয়ারি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল গঠনে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। এরপর গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পাকিস্তান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম’ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দেশের পোশাক খাতে ব্যবসা বাড়াতে এই ফোরামে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সঙ্গে পাকিস্তান তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (পিআরজিএমইএ) এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এখনই পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক ইস্যুগুলোর সমাধানে উপযুক্ত সময়। সংকটের মধ্যেও কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছে, এবং বাংলাদেশকে তা কাজে লাগাতে হবে।

সাবেক এক হাইকমিশনার মন্তব্য করেন, ‘ভারতের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক রাখা যায়, পাকিস্তানের সঙ্গেও তেমন সম্পর্ক রাখা সম্ভব—শুধু দরকার সাহসী ও কৌশলী কূটনীতি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধানের পথে এগোনো উচিত।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *