ডায়াল সিলেট ডেস্ক:-
ক্যাম্পাসের নানাবিধ সমস্যা নিরসনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডেমোক্র্যোটিক স্টুডেন্স ফোরাম, শাবিপ্রবি’ নামে এক নতুন প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউসি ভবনের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এক সভায় লোগো উন্মোচন ও লক্ষ্য- উদ্দেশ্য ঘোষণার মাধ্যমে এ প্লাটফর্মটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
এ প্ল্যাটফর্মটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে প্রভাব মুক্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষককে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়নি।
শিক্ষার্থীদের হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংগ্রাম-আন্দোলনে য্ক্তু থাকা চারজনে শিক্ষার্থীকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যার বিভাগের শিক্ষার্থী ইফরাতুল হাসান রাহিম ও অর্থনীতি বিভাগের হাসিব, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মেহরাব সাদাত এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সুলতানা আক্তার লুবনা।
সভায় প্ল্যাটফর্মটির সম্পর্কে উপদেষ্টা মেহরাব সাদাত লিখিত বক্তব্যে বলেন, “গণতান্ত্রিক চিন্তায় বিশ্বাসী ও অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ডেমোক্র্যোটিক স্টুডেন্স ফোরাম,শাবিপ্রবি। এখানে বিভিন্ন মতাবলম্বী শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, যারা প্রত্যেকেই পরমতসহিষ্ণুতা এবং গনতন্ত্রের প্রশ্নে এক কাতারে কাজ করবেন। এটি একটি অলেজুড়বৃত্তিক প্লাটফর্ম যা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সহ জনতার ন্যায়সঙ্গত সকল গণআন্দোলন কে ধারণ করে এগিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।”
তিনি আরও লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, “অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা যেই স্বপ্নের রাষ্ট্র এবং ক্যাম্পাস চেয়েছিলাম, সেই স্বপ্ন অধিকাংশেই ভঙ্গ হয়েছে। অপরাজনীতি, প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা ও দ্বিচারিতা, শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো জর্জরিত। তথাপি গণতান্ত্রিক শক্তির সংগঠিত সংগ্রাম ছাড়া এরূপ অবস্থা থেকে নিস্তার অসম্ভব। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তি এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারের পিছনের গোপন শক্তির প্রতি অধিকার সচেতন ও রাজনীতি সচেতন প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভরসা রাখতে পারেন নি। কাজেই দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসের নানারকম অন্যায় অবিচার নিয়ে প্রতিরোধ করা, অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ এই ক্যাম্পাসে নিজেদের প্রকৃত অংশীদারিত্ব বুঝে নিয়ে সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার প্রত্যয় নিয়ে গঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী ফোরাম, শাবিপ্রবি।”
এসময় তিনি প্ল্যাটফর্মটির উদ্দেশ্যসমূহ তুলেন ধরেন। উদ্দেশ্যসমূহ হল- আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমরা সকল শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়েই নিম্নোক্ত বিষয়গুলি নিয়ে প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন করব, ক্রমাগত সচেষ্ট থাকব এবং প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব;
১) একাডেমিক হয়রানি নিরসন শিক্ষার্থীদের যেকোন একাডেমিক জটিলতা, দেরি, অন্যায় ফলাফল বা হয়রানি প্রতিরোধ করা।
২) মৌলিক চাহিদা পূরণ খাদ্য সংকট, আবাসন সংকট, পরিবহন সংকট ইত্যাদির টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা।
৩) গণতান্ত্রিক চর্চা শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক অপতৎপরতার বিনাশ ঘটানো।
৪) নিরাপদ ক্যাম্পাস যৌন হয়রানি, সাইবার বুলিং, র্যাগিংসহ সকল প্রকার নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা এবং নারী-শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
৫) সংখ্যালঘু ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অধিকার সকল শিক্ষার্থীর সমঅধিকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৬) ধর্মীয়, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও বিশ্বাসের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
৭) প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষা ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার্থে সচেষ্ট থাকা এবং পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলা।
৮) জাতীয় ইস্যুতে ভূমিকা রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিকসমাজ হিসেবে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সোচ্চার ভূমিকা রাখা।
৯) স্বচ্ছ প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট, বাজেটের ব্যায়ের খাতসমূহ, বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত ও নীতিমালায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সাধারন শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত করা।
১০) দ্রুত সহায়তা ব্যবস্থা দুর্ঘটনাগ্রন্থ, অসুস্থ বা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সহায়তা ও প্রয়োজনে ফান্ড উত্তোলন ও সাপোর্ট টিম গঠন করে দেয়া।
১১) ক্যাম্পাসে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ধর্মচর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে নামাজের স্থান ও হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য মন্দিরের ব্যাবস্থা। সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় সুরক্ষার নিশ্চিতকরণ।
১২) সাংস্কৃতিক চর্চা শিক্ষার্থীদের মনন বিকাশের লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোখ।
১৩) ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে উন্নতি ঘটানোর জন্য কাজ করা কোন শিক্ষার্থী অহেতুকভাবে প্রসাশন কিংবা কোন শিক্ষক বা শিক্ষকদের থানা হয়রানির শিকার হলে সেই বিষয়ে দ্রুত চলে পদক্ষেপ নেয়া।
১৪) যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন – শিক্ষার্থীদের যেকোন যৌক্তিক দাবীকে পূর্ণ সমর্থন দেয়া এবং সেই দাবী বাস্তবায়নে উদ্দ্যোগ গ্রহন এবং বা বাস্তবায়ন করা।
নতুন এই প্লাটফর্মের প্রথম আহ্বায়ক কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুস্তাকিম বিল্লাহকে আহ্বায়ক ও একই বর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী এম কে সাজ্জাদকে মুখপাত্র করা হয়। এছাড়া একমিটিতে আরও ৫০জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
শিগগিরই গঠিত আহ্বায়ক কমিটি এ প্ল্যাটফর্মের ১ম কার্যনির্বাহী ঘোষণা করবেন বলে সভায় জানানো হয়।