ডায়াল সিলেট ডেস্ক:-

পাঁচদিন ব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। রবিবার মহা ষষ্ঠীর মধ্য পূজার অনুষ্ঠানিকতা শুরু। হয়েছে আজ মহাসপ্তমী। সিলেটের হিন্দু বহুল পাড়ায় পাড়ায় ঘঠা করে আয়োজন চলছে পূজার। এরমধ্যে পূজার আমেজে সুসজ্জিত ও মুখরিত চারদিক।

ষষ্ঠীর ভোরে সূর্য উদয়ের পরে দুর্গা মণ্ডপে জলভর্তি তামার কলস জাতীয় পাত্র বা ঘট স্থাপন করা হয়। এর পরে দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয়। এটাই কল্পারম্ভ । পুজোর সংকল্প নেওয়া হয় এই পর্বেই । মহা ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসে রবিবার শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজা। বাদ্যবাজনা, উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ, কাঁসর, ঘণ্টা বাজিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার বন্ধনা করে গতকাল রবিবার থেকে দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা পর্ব শুরু হয়েছে। আজ সোমবার মহাসপ্তমীর উচ্ছ্বাসে চারদিকে পূজার আনন্দে মশগুল সনাতনীরা ।

গোধূলি বা সন্ধ্যায় তিথি ও ক্ষণ মেনে বোধনের পুজো সম্পন্ন হয়। বোধন শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল জাগরণ। এই সময়ে সূর‌্যের দক্ষিণায়ন চলে, যা দেবতাদের নিদ্রাকাল। বোধন ঘরে বা বোধন স্থলে বেদির উপর বিল্ববৃক্ষ (বেলগাছ) বসানো হয়। গাছ না থাকলে, বিল্বশাখাও রাখা যায়। বিল্ববৃক্ষের সামনে পঞ্চপল্লব ও ডাব দিয়ে ঘট স্থাপন করা হয়। পঞ্চপল্লব অর্থাৎ আম, অশ্বত্থ, বট, পাকুড় এবং যজ্ঞডুমুর। ওই বেলগাছটিকে দেবী কল্পনা করে আরাধনা করা হয়। দেবীকে জাগিয়ে তোলা হয় প্রার্থনার মাধ্যমে। বোধনের পুজোয় শিব, দুর্গা, নারায়ণ ও কুলদেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। বোধনের পরে অধিবাসের পালা। দেবীকে আবাহন করা হয়। পরের দিন অর্থাৎ সপ্তমীতে পুজো গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁকে। কিছু লোকাচারও রয়েছে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেবীকে অস্ত্রসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়। তাঁর দশ হাতে দেওয়া হয় দশ অস্ত্র। অনেক মা—ঠাকুমারা এই দিন সন্তানের মঙ্গল কামনায় মা ষষ্ঠীর ব্রত উপবাস পালন করেন।

দেবীর নিকট মঙ্গল ঘট বসিয়ে শুরু হবে সঙ্কল্পের পালা। ফলনের দেবী হিসেবে মহাসপ্তমীতে মা দুর্গার পূজা হয়। অন্যান্য আরও ৮টি গাছের সাথে বেল গাছের শাখা কেটে রাখা হয়। এই নয়টি গাছের শাখাকে স্নান করিয়ে পূজার জায়গায় নিয়ে আসা হয় এবং এর পরেই মাটির প্রতিমায় হয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা। বলা হয় দুর্গা পূজার এই ৫ দিনে যত পূজা হয় তার মধ্যে মহাসপ্তমীর পূজাটাই সবচেয়ে বেশি সময় ও নিয়মকানুনের ।

ক্রমে ক্রমে দুর্গাপূজা আড়ম্বরপূর্ণতা বেড়েই চলেছে । ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয় সপ্তমীর সকালে ।
নবপত্রিকা স্নান দিয়ে শুরু হবে মা দুর্গার আরাধনা। নবপত্রিকায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজাদিসমূহ অনুষ্ঠিত হবে।

উলুধ্বনি, শাঁখের সুর, সঙ্গে ঢোলের তাল ও মাতৃবন্দনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সকালে। নানাবিধ অর্ঘ উপাচারে ডালা সাজিয়ে আসতে থাকবে ভক্তরা। পূজা শেষে হাতের মুঠোয় ফুল, বেলপাতা নিয়ে ভক্তরা মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সপ্তমীতে পূজার প্রথম অঞ্জলি অর্পন করা হয় দেবীর পায়ে ।পুজো চলে মহানবমী পর্যন্ত। ষষ্ঠীতে দেবীকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রন করা হয় । মূলত কল্পারম্ভ, বোধন, অধিবাস এবং আমন্ত্রণ— এই চারটি আচার নিয়েই ষষ্ঠী। তারপর পর্যায়ক্রমে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী। বিজয়া দশমীতে দেবীর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে পূজোর শুভ সমাপ্তি হয়।

নানাবিধ আচার আর আড়ম্বরপূর্ণ উদযাপনে দেবীর পূজায় মশগুল সিলেটের সনাতনী পাড়া ও পূজা মান্ডবগুলো। নারী, পুরুষ,ও শিশুরা পাড়ায় পাড়ায় মান্ডবে মান্ডবে ভিড় জমাচ্ছে । এভাবেই, আরতি,মন্ত্র পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি অর্পন, বাদ্য বাজনা, ও বিবিধ আনন্দ আয়োজন চলতে থাকবে মহানবমীর শেষ রাত অবদি সনাতনীদের এই আমেজপূর্ণ্য দূর্গোসব।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *