ডায়াল সিলেট ডেস্ক:-

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের পুকুর পাড়ের পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের স্মরণে স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে কলেজের শহীদ চার শিক্ষার্থীর স্মরণে দেশ স্বাধীনের পরে কলেজের তৎকালীন শিক্ষার্থীর ওই শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। হঠাৎ ভেঙে নতুন ফলক নির্মাণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে কলেজ প্রশাসন বলছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ওই স্মৃতি ফলক করছে, নতুন শহীদ মিনার হওয়ায় কলেজের দ্বিমত ছিলো না ওই বিষয়ে। 

মহান মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ৪ শিক্ষার্থী শহীদ হন। তারা হলেন- শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস বীরবিক্রম, শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা তালেব আহমদ, শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন ও শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর। দেশ স্বাধীন হবার পরে কলেজের তৎকালীন শিক্ষার্থীরা তাদের স্মরণে পুকুর ঘাটে একটি শহীদ মিনার স্থাপন করেন। এছাড়াও প্রতিটি স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে ছাত্র-শিক্ষকের পক্ষ থেকে ওই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। তবে কয়েক বছর আগে নতুন একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। এটিও চার শহীদের স্মরণে। এছাড়াও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভবনের পাশে নতুন আরেকটি নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

সম্প্রতি কলেজের ওই পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে নতুন আরেকটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হচ্ছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থীদের নামফলক এটি। কয়েক বছর আগে এরকম আরেকটি স্মৃতি ফলক হয়েছে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই ফলকে বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ আছে।

তবে কলেজের পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থীদের নামফলক করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে স্থাপনাটি। মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, শহীদ মিনার ভেঙে কোনো অবস্থাতেই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নাম ফলক করা ঠিক হয় নি। এই কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো পরামর্শও নেওয়া হয় নি।

সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মোনাজ্জির হোসেন সুজন বলেন, প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থীদের নামফলক হবে ভালো, তবে কলেজে জায়গার অভাব নেই। এরচেয়ে ভালো জায়গা আছে, যেখানে সকলের দৃষ্টি পড়বে। কেনো পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে একম একটি কাজ করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এটি খুবই নিন্দনীয় কাজ।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মোমেন বললেন, ‘দেশ স্বাধীনের পরে কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেছিলো। যেহেতু মহান মুক্তিযুদ্ধে কলেজের চারজন ছাত্রনেতা শহীদ হয়েছেন, এখানে অনেক আবেগ আছে। এর আগে ওখানেই সবাই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে। কয়েক বছর আগে আরেকটি শহীদ মিনার হয়েছে। তবুও পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নাম ফলক করা ঠিক হয় নি। এরকম নামফলক করার আগে মুক্তিযোদ্ধাসহ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা  যেতো।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক বলেন, একটি স্মৃতিফলক ভেঙে আরেকটি স্মৃতিফলক করা ঠিক নয়। এজন্য এই কাজ বন্ধ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলাপ করবো। যদি স্মৃতিফলক করতে হয় তাহলে কলেজের অন্য জায়গায় নির্মাণ করা হোক, পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে নয়।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুল রহমান বলেন, কলেজের প্রাক্তন কৃতি শিক্ষার্থীদের নাম ফলক হচ্ছে। এটি করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারাই জায়গাটি নির্বাচন করেছে। যেহেতু আমাদের নতুন আরেকটি শহীদ মিনার হয়েছে, তাই পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে নাম ফলক নির্মাণ করায় আমাদের কোনো দ্বিমত ছিলো না।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বললেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ওখানে স্মৃতিফলক হচ্ছে। একমাস আগে এর কাজ শুরু হয়েছে। আজকে বিষয়টি নিয়ে নানাপক্ষ কথা তুলেছেন, জেলা প্রশাসকও ফোন দিয়েছেন। এজন্য কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। সকলে চাইলে আগের আদলে, এর পাশেই আরেকটি শহীদ মিনার করা যেতে পারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *