
ডায়ালসিলেট ডেস্ক:নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, দেশবাসীকে নাড়া দেয়া এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি মাইলফলক। এ রায় এ ধরণের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রোধে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিচারের মাধ্যমে তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে এটাকে অবশ্যই স্বাগত জানাচ্ছি। দ্রুত বিচার হয়ে আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে এটা সুখবর। তবে বর্তমান বিশ্বে একটি হত্যাকাণ্ডের জন্য এত বেশি সংখ্যক লোকের মৃত্যুদণ্ড দেয়া খুবই অস্বাভাবিক। এতগুলো মৃত্যুদণ্ড দেয়ার কারণে বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তির জন্য সহায়ক হবে না। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে মোট ২শ দেশের মধ্যে ১শ ৬০টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় না।
বাকী মাত্র ৪০টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। ২০১৮ সালে এই ৪০টি দেশের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ পঞ্চম অবস্থানে আছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল নৃশংস হত্যাকাণ্ড। সমাজের যারা এই ধরনের অপরাধ করে সেই অপরাধীদের তাড়াতাড়ি বিচার হয়েছে।
এতে আমি মনে করি সমস্ত জাতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এভাবে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে একটি মেয়েকে নির্যাতন করার চেষ্টা করেছে। তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই ধরনের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড কমই হয়। এক্ষেত্রে এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতে অন্যরা এই ধরনের অপরাধ করতে সাহস পাবে না। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা নি:সন্দেহে ভালো একটি খবর।
খুব দ্রুত রায় হয়েছে। এখন আশা করবো আপিলের বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে যাতে হয়। এটি হলে মামলার পুরো কার্যক্রমটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, এই ধরনের ‘কুইক জাস্টিস’ যদি করা যায় তাহলে মনে হয় সমাজে অনেক সমস্যা কমে আসতে পারে। আমাদের দেশে ফাঁসির আসামিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমার সংস্কৃতি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইউএসএআইডি এই অনারারি ফেলো বলেন, এক্ষেত্রে এগুলো ক্ষমার অযোগ্য। কারণ এটা অত্যন্ত নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল। কাজেই যে রায় হয়েছে সেটা খুব ভালো হয়েছে। মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, আমরা যে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার সেটা হল দ্রুত এবং স্বচ্ছ বিচার। সেই জিনিসটি এখানে হয়েছে। এবং এখানে আমি নুসরাতকে সবচেয়ে সাহসী নারী, প্রতিবাদি নারী হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই। তার মৃত্যুর সকল এভিডেন্স মারা যাওয়ার আগে সে রেখে গিয়েছে। তার কথা, ভিডিও ফুটেজ, ডাইং ডিক্লারেশন-এ সে মারা যাওয়ার আগে সব কিছু বলে গেছে। ফলে বিচার কার্যের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিচার অন্য খাতে প্রবাহিত হতে পারেনি। এটা ছিল একটি বড় পদক্ষেপ। তার সঙ্গে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সবার সদিচ্ছা থাকলে যে সুষ্ঠু বিচার করা যায় সে বিষয়টি এখানে স্পষ্ট। নুসরাতের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা বা প্রটেকশন দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের একটি চাপ ছিল।
এখানে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিমকোর্টে এই বিষয়টি মাত্র ৬১ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে এবং ইনভেস্টিগেশনটি শেষ হয়েছে ৩৩ কার্যদিবসে। ফলে, আমাদের একটি দাবি থাকবে এই ধরনের মামলা যেন দ্রুত বিচারে শেষ হয়ে যায়। এবং পরবর্তীতে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিমকোর্ট হয়ে আসামীদের ফাঁসি কার্যকর করা। যেটা মানুষ মনে রাখবে। অতএব আমরা মনে করি এটা একটি ভালো পদক্ষেপ। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ড আমাদের মানব সভ্যতার ইতিহাসে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘৃণিত অপরাধ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে থাকবে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ তার নিজের ছাত্রীর সঙ্গে যে অশালীন আচরণ করেছে, এবং সর্বপোরি তাকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এটা সম্পূর্ণভাবে ক্ষমার অযোগ্য। অধ্যক্ষসহ বাকী যাদের শাস্তি হয়েছে এটা কিন্তু জনগণের দাবি ছিল। সমাজের দাবি ছিল। এই রায়ের ফলে আমার কাছে মনে হলো আমাদের দেশে আইনের শাসন আছে এই বিশ্বাসটি মানুষের মনের মধ্যে পূন:প্রতিষ্ঠিত হলো। আমরা আশা করি, এই রায় দ্রুততর সময়ের মধ্যে কার্যকর হবে। এবং এক্ষেত্রে আমাদের আইনজীবীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে লড়বেন। যাতে এই অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যেন কোনো ফাঁক ফোকর গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারেন।