চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাদ্রাসায় আট বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানোর ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোার্ট। তবে শিশু শিক্ষার্থীদের শাসন করার বিষয়ে ওই মাদ্রাসাসহ সকল মাদ্রাসার প্রধানদের সতর্ক করেছেন আদালত। এসময় আদালত বলেন, মারধরের শিকার সেই শিক্ষার্থীর পড়ালেখা যেনো বন্ধ না হয় সে বিষয়ে বলেছে আদালত। একইসঙ্গে দেশের সকল মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

শুনানির নির্ধারিত দিনে রোববার (১৪ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব পর্যবেক্ষণ দেন। বিষয়টি আদালতের পর্যবেক্ষণে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

হাইকোর্ট বলেছেন, মাদ্রাসায় নির্যাতন, বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, এমনকি যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এ বিষয়ে অনেক আগে থেকে আদালতের নির্দেশনা আছে। নির্দেশনাগুলো সব জায়গায় যাতে কার্যকর হয়। কমিটি গঠনসহ আদালতের নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়নে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যাতে সচেষ্ট থাকে।

শুনানিকালে আদালত বলেন, মারধরের শিকার শিশুটির লেখাপড়া ভয়ভীতির কারণে বন্ধ হয়ে না যায়, এটি যেন তারা খেয়াল রাখে।

ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন ১১ মার্চ আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ওই ঘটনায় নেওয়া পদক্ষেপ রোববারের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে মৌখিক আদেশ দেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপসংক্রান্ত তথ্য জানাতে বলা হয়। তার ধারাবাহিকতায় আজ রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার পদক্ষেপসংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালতের মৌখিক নির্দেশনা অনুসারে দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায় দণ্ডবিধি ও শিশু আইনে এই ঘটনায় ১০ মার্চ মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা মো. ইয়াহিয়াকে নিম্ন আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুসারে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রতিষ্ঠান থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। নির্যাতিত শিশু শিক্ষার্থীকে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির বাসায় তিনজন পুলিশ মোতায়েন করে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রথমে শিশুটির মা-বাবা মামলা করতে চাননি বলে পর্যবেক্ষণ এসেছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার (কাউন্সেলিং) পর শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ দায়িত্বশীল যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই মাদ্রাসা বা অন্য কোনো মাদ্রাসায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছিন্ন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।

সূত্র জানায়, হেফজ বিভাগের শিশুটির জন্মদিন উপলক্ষে তাকে দেখতে ৯ মার্চ বিকেলে মা-বাবা মাদ্রাসায় আসেন। তাঁরা চলে যাওয়ার পরপরই শিশুটি মাদ্রাসা থেকে বাইরে বের হয়। তখন শিশুটিকে ধরে মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে মারধর করেন শিক্ষক ইয়াহিয়া। ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক ইয়াহিয়া শিশুটিকে ঘাড় ধরে মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে যান। পরে তিনি শিশুটিকে বেধড়ক মারধর করেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *