ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: মোবাইল কোর্টে জরিমানার টাকা আত্মসাৎ করায় অভিযুক্ত এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার, ভূমি) সুমিত সাহাসহ সংশ্লিষ্ট নাজির ও পেশকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া এসি ল্যান্ড অফিসে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরবর্তী ধাপ হিসেবে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্র জানায়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক সেকশন অফিসার মো. অলিউল্লাহ আহাদ নামে এক ব্যক্তি গত ৩১ জানুয়ারি এসি ল্যান্ড সুমিত সাহার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানার অর্ধেক টাকা আত্মসাৎসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঝালকাঠি ডিসি অফিসের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামাল হোসেনকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারি বড় কাঁঠালিয়া গ্রামে অবস্থিত মেসার্স ত্ব-হা ব্রিকস ফিল্ডে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন কাঁঠালিয়া এসি ল্যান্ড সুমিত সাহা। এ সময় অভিযান টিমে যথারীতি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে ছিলেন এসি ল্যান্ড অফিসের নাজির ও পেশকার মাইনুল ইসলাম। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে এসি ল্যান্ডের নির্দেশে ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত সদস্যরা পানি দিয়ে ইট ভাটার আগুন নিভিয়ে দেন। এতে বেশকিছু কাঁচা ইটও নষ্ট হয়। সেখান থেকে আটক করা হয় ইটভাটার স্টাফ হাবিবুর রহমান কাজী ও মফিজুল ইসলামকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ইটভাটার মালিক পক্ষের প্রতিনিধি শাহিন আকন। তিনি তদন্ত কমিটিকে জানান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় তাদের ইটভাটার অনেক ক্ষতি করা হয়। প্রথমে এসি ল্যান্ড ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার কথা বলেন। কিন্তু এত টাকা তারা কোথা থেকে দেবেন-জানিয়ে জরিমানার টাকা কমানোর জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু টাকা না দিলে তাদের জেলে পাঠানো হবে বলেও বলা হয়। এক পর্যায়ে জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ৪ লাখ টাকা ধার্য করা হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিতে না পারায় আটককৃত ইটভাটার কর্মচারী হাবিবুর রহমান কাজী ও মফিজুল আলমকে এসি ল্যান্ড অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে শাহিন আকন এসি ল্যান্ড অফিসে যান। কিন্তু টাকা কম হওয়ায় এসি ল্যান্ড ক্ষুব্ধ হন। এরপর বাধ্য হয়ে ১ ঘণ্টা সময় নিয়ে পরবর্তীতে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি ইটভাটায় ফিরে গিয়ে জরিমানার ডিসিআর রসিদ পড়ে দেখেন সেখানে লেখা আছে ২ লাখ টাকা।

এদিকে মোবাইল কোর্টের নামে এভাবে জরিমানার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে পরদিন ২৬ জানুয়ারি এসি ল্যান্ড অফিসের নাজির মাইনুল ইসলাম ২ লাখ টাকা ফের দিতে ইটভাটায় যান। কিন্তু কোনো লিখিত ডকুমেন্ট ছাড়া শাহিন আকন এভাবে টাকা ফেরত নিতে অস্বীকার করেন।

তদন্ত কমিটির ৯ পৃষ্ঠার বিশদ প্রতিবেদনের শেষদিকে সার্বিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমিত সাহা ইটভাটা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন। কিন্তু তিনি এবং তার পেশকার মাইনুল ইসলাম যোগসাজশ করে ২ লাখ টাকা ডিসিআর দেন এবং অবশিষ্ট ২ লাখ টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা করেন। এছাড়া সুমিত সাহার বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা পাঠানোর বিষয়টির সত্যতা প্রমাণিত।’

তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে মোট ২০ পৃষ্ঠার সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যে অভিযুক্ত এসি ল্যান্ড সুমিতা সাহা দাবি করেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। তবে এই কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে কাঁঠালিয়া থেকে বদলি করে বরগুনার একটি উপজেলায় এসি ল্যান্ড হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। নাজির কাম পেশকার মাইনুলকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ডিসি কার্যালয়ে।

ডায়ালসিলেট/এম/এ/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *