ডায়ালসিলেট ডেস্ক::দেশের প্রথম আর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস জাদুঘর হচ্ছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায়। উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়নের ঘাগটিয়া ও কামারকান্দি গ্রামের মধ্যস্থানে এবং মেহেদীবাগ চা বাগানের পাদদেশে প্রায় ১০ একর এলাকায় আভিজাত্য এবং ঐতিহ্যের মিশেলে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ‘মাহে-মনি আর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস মিউজিয়াম’। এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও উদ্যোক্তা সাবেক অ্যাথলেট, ক্রীড়াবিদ ও সাংবাদিক সাঈদ-উর-রব। তিনি সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত ক্রীড়াবিদ। তাঁর বাড়ি উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের আমলৈ গ্রামে। বর্তমানে স্ব-পরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তিনি। জানা যায়, অ্যাথলেট হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ পরিচিত সাঈদ-উর-রব। খেলাধুলা থেকে অবসর নিলেও ক্রীড়াঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতে দেশ-বিদেশে কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যান তিনি। খেলাধুলায় দেশের অর্জন অনেক সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তা সংরক্ষণে ছিল না কোনো উদ্যোগ। সেই আক্ষেপ থেকেই সুদূর আমেরিকায় থেকেও নিজ জন্মভূমি কুলাউড়ায় দেশের প্রথম আর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ২০১৪ সালে প্রায় ৩০ বিঘা জমি জুড়ে ‘মাহে-মনি আর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস মিউজিয়াম’ এর কাজ শুরু হয়। দেশ ও বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্যের ইতিহাস, বিশ্বের নামীদামি চিত্রশিল্পীদের পোট্রিয়েট এবং ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন সংগ্রহের মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মূলত এই মিউজিয়াম তৈরি করছেন সাঈদ-উর-রব। ১২ হাজার বর্গফুট জায়গা জুড়ে মিউজিয়ামের ৪ তলা বিশিষ্ট মূল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনের ভেতর মিউজিয়ামে থাকবে দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা প্রয়াত ও বর্তমান ক্রীড়াবিদদের ব্যবহৃত দুর্লভ ক্রীড়াসামগ্রী, অটোগ্রাফ, ছবিসহ বিভিন্ন সামগ্রী। বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক নানা তথ্যবহুল বই, পোট্রিয়েট ও নিদর্শন এখানে সংরক্ষণ করা হবে। থাকবে বিশাল পাঠাগার, কনফারেন্স রুম, ফুড কোর্ট-ক্যাফেটেরিয়া ও সুইমিংপুল। শিশুদের জন্য হবে পৃথক বিনোদনের ব্যবস্থা। ভবনের ভেতর থাকবে ৮টি অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স ভিলা (কটেজ)। মিউজিয়ামে দূর-দুরান্ত থেকে আসা গবেষক, লেখক ও দর্শনার্থীরা অবকাশ যাপন করতে পারবেন এসব ডুপ্লেক্স ভিলাতে। ভবনের সম্মুখে রয়েছে বিশাল খোলা জায়গা। যেখানে শান-বাঁধানো ঘাটের দিঘি খনন করা হয়েছে। দিঘির চারপাশে অঙ্কিত হচ্ছে বনেদি আমলের খাঁজকাটা কারুকাজ। এ ছাড়াও দিঘির পূর্ব পাশে শৈল্পিক কারুকার্যে ছোঁয়ায় নির্মাণ করা হয়েছ দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ। মঞ্চের খোলা স্থানে কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে। মিউজিয়াম এলাকায় মঞ্চের পাশে ছোট্ট দেয়ালে লাগানো হয়েছে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণের কারুকাজ এবং খোদাই করে লেখা হয়েছে দেশের ৬৪টি জেলার নাম। কর্তৃপক্ষের দাবি, ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হতে পারে। মিউজিয়ামটির কাজ সম্পন্ন হলে এটি হবে দেশ-বিদেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, খেলোয়াড়, প্রত্নতত্ত্ববিদদের গবেষণার তীর্থস্থান। এই প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর (সমন্বয়কারি) হাবিবুর রহমান টুটু বলেন, ২০২১ সালে মিউজিয়ামটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত বছর থেকে করোনার লকডাউনের জন্য কাজে বন্ধ ছিল। আশা করছি আগামী বছরে এর কাজ শেষ হবে। টুটু বলেন, প্রাচীন আভিজাত্য আর আধুনিক শৈল্পিক ছোঁয়ার সমন্বয়ে নির্মিত হচ্ছে এর অবকাঠামো। নিখুঁতভাবে কাজ করতে একটু বেশি সময় লাগছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও শোভা পাবে এর আশপাশে। এটি হবে গবেষক ও দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *