প্রকাশিত: ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২১
ডায়ালসিলেট ডেস্ক:;অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ওই দেশের সীমান্তরক্ষীর (বিএসএফ) কাছে আটক হয়েছেন ঢাকার বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা। তিনি গ্রাহকের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পরিচালক ছিলেন। ঢাকার গুলশান থানার ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাতের
একটি মামলার আসামিও তিনি। বিএসএফ শুক্রবার তাকে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা থেকে আটক করে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করেছে। আটকের পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তার আগে বিএসএফ সদস্যরা সোহেল রানাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে নানা তথ্য পেয়েছে। তবে এট পুলিশ কর্মকর্তা আটকের বিষয়ে বাংলাদেশের পুলিশ বা বিজিবি এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান জানিয়েছেন, ভারতীয় সীমান্তে বনানী থানার পরিদর্শক আটক হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে বিএসএফ’র পক্ষ থেকে এখনও তাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) হায়দার আলী খান বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে খবরটি আমরা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে এখন নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে সোহেল রানা আটকের পর ঢাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সোহেল রানা সরকারি চাকরিজীবী হয়ে ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কীভাবে জড়িত হলেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ধরা পড়ার ভয়ে তিনি গা-ঢাকা দিচ্ছিলেন। গা-ঢাকা দেয়ার সময় কর্মস্থল থেকে তিনি কোনো ছুটি নেননি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিনি কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর থেকে কর্মস্থলের সঙ্গে তার আর যোগাযোগ নেই। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আজম মিয়া জানান, সোহেল রানা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে আর তিনি থানায় আসেননি। ডিএমপি’র গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবারের পর সোহেল রানা আর থানায় আসেননি। ছুটিও নেননি, রিপোর্টও করেননি। গণমাধ্যম থেকে আমরা খবরটি পেয়েছি। তবে ভারতে আটক ওই ব্যক্তি বনানী থানার পরিদর্শক কিনা সেটি এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সীমান্ত টপকে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে সোহেল রানাকে আটক করেছে বিএসএফ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই প্রকাশ্যে আসে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। অন্যদিকে তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বিদেশি পাসপোর্ট, একাধিক মোবাইল ফোন, এটিএম কার্ড। এরপর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। ওই গণমাধ্যমটি আরও বলেছে, প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার সোহেল রানা জানিয়েছে, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে তার বাড়ি। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত আছেন। দেশে তার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ রয়েছে। তবে ঠিক কি কারণে তিনি সীমান্ত পার হতে চেয়েছিলেন তা এখনও জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে বিএসএফ ধারণা করছে গা-ঢাকা দেয়ার জন্য সোহেল রানা ভারতে প্রবেশ করেছেন।
গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৭ই আগস্ট ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা মামলার সিদ্ধান্ত নেন। মামলার আসামিরা হলেন- ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্লাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ এবং পুলিশের বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা। এদের মধ্যে সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামীসহ তিনজন এখন কারাগারে। শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন সোহেল রানা। তবে অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে তার নাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের আপন ভাই এই সোহেল রানা। আর আসামি বিথী আক্তার তার চতুর্থ স্ত্রী বলে মামলার বাদী জানিয়েছেন।
সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা: গ্রাহকের ৭৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পরিচালক বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমান উল্লাহ, নাজনিন নাহার বিথী, কাওসার, কামরুল হাসান, আব্দুল কাদের, নূরজাহান ইসলাম সোনিয়া ও রুবেল খান। গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার (৩১শে আগস্ট) ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে ইসতিয়াক হোসেন টিটু নামে এক ব্যক্তি সোহেল রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। আদালত গুলশান থানাকে আবেদনটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। আমরা আদালতের নির্দেশে আবেদনটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করি। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলছে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, আসামিরা ই-অরেঞ্জ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মচারী ও সহযোগী। তারা ই-অরেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহ ও বিক্রি করেন। মামলার বাদী ও সাক্ষীরা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পণ্য কেনার জন্য নগদ, বিকাশ, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ও তারিখে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ভাউচার গ্রহণ করেন। পরে ক্রেতাদের নিজ নিজ ই-অরেঞ্জ অ্যাকাউন্টে বাদীসহ আম-মোক্তারনামা ১০ জন ৭৬ লাখ ৪১ হাজার ১০২ টাকা টাকা প্রদান করেন। টাকা প্রদানের পর পণ্য না দিয়ে এ অর্থ আসামিরা আত্মসাৎ করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, মামলার বাদী ও সাক্ষীরা পণ্য কেনার পর তাদের পণ্য সরবরাহ এবং ডেলিভারি প্রদান করেনি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছুদিনের মধ্যে মালামাল সরবরাহ করবে বলে জানায়। পরে বাদী ও সাক্ষীরা জানতে পারেন যে, ই-অরেঞ্জ নামের প্রতিষ্ঠানটি তাদের মালিকানা পরিবর্তন করেছে। বর্তমান মালিক মালামাল সরবরাহ করতে অনীহা প্রকাশ করাসহ আগের মালিকদের নাম ও ঠিকানা সম্পর্কে কিছুই জানাচ্ছেন না। এতে বাদী ও আম- মোক্তারনামার আসামিদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
ডায়ালসিলেট এম/
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech