প্রতিহিংসার মাশুল গুনছে আফগানিস্তান

প্রকাশিত: ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১

প্রতিহিংসার মাশুল গুনছে আফগানিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::আমি ভাবতেই পারিনি, আমেরিকা প্রতিশোধ নিতে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালাবে। আমি ভেবেছিলাম, তারা আমাদের থেকে অনেক অনেক দূরের একটা দেশ।’ নাইন ইলেভেন হামলা ও এরপর যুক্তরাষ্ট্রের আফগান আক্রমণ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আবদুস সামাদ। আফগানিস্তানের দক্ষিণে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহারের বাসিন্দা তিনি। পেশায় একজন লাইব্রেরি পরিচালক।

দুদিন আগেই আল কায়দার যোদ্ধারা আফগানিস্তানের খ্যাতনামা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা ‘পঞ্জশিরের সিংহ’ আহমদ শাহ মাসুদকে হত্যা করে। তখনো এই মহান নেতার মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি আফগানরা। আফগানিস্তান থেকে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার দূরে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটতে থাকে একের পর এক লোকহর্ষক ঘটনা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে চারটি বিমান ছিনতাই হয়। বিমানগুলোর মধ্যে দুটি বিধ্বস্ত হয় নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারের যুগল ভবনে। ওয়াশিংটনের তৎক্ষণাৎ অভিযোগ, চরমপন্থি সংগঠন আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে আফগানিস্তান থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে। সেই সঙ্গে এর চরম প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণাও দেয় তৎকালীন মার্কিন নেতারা।

নাইন ইলেভেন হামলার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের হইচই এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিশোধের হুমকি দিলেও অনেক আফগানই বিষয়টাকে প্রথমে ততটা পাত্তাই দেয়নি। বিশ্বে চলমান আর ১০টা ঘটনার মতোই মনে করেছিল তারা। ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি, তাদের সামনে কি ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। ঠিক ২০ বছর পর সেই সময়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে এমনটাই জানালেন কয়েকজন আফগান নাগরিক।

আবদুর রহমান। বর্তমানে একজন সরকারি কর্মকর্তা। এখন অবসরপ্রাপ্ত। নাইন ইলেভেন হামলার সময় তার বয়স ছিল ২০-এর কোঠায়। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে সম্প্রতি এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সেদিন সন্ধ্যায় খবরটা শুনলাম। আমেরিকার কোথায় যেন হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলে চলেন, ‘প্রথমে বিষয়টা আমি পাত্তাই দিইনি। কারণ এমন কতশত হামলার কথা রোজই রেডিওতে শোনা যায়।’

পরদিন সকালেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়ে আসে টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনা। লোকজন তাই দেখতে ভিড় করতে থাকে পত্রিকার দোকানে। সেদিনের কথা স্মরণ করে লাইব্রেরি পরিচালক আবদুস সামাদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমেরিকা অনেক দূরের একটা দেশ। তারা যে প্রতিশোধ নিতে এতদূর এসে আগ্রাসন চালাবে, আমার ভাবনাতেই ছিল না।’ আবদুস সামাদ বলেন, ‘তারা আসলে আফগানিস্তানের আক্রমণের একটা অজুহাত খুঁজছিল। দেশ দখলের অজুহাত।’ দুদিন পর ঠিকই হামলা শুরু করে আমেরিকা। লন্ডভন্ড করে পুরো আফগানিস্তান। সেই কথাই উঠে আসে কান্দাহারের তালাচাবি মিস্ত্রি কিয়ামুদ্দিনের কণ্ঠে। তিনি বলেন, আফগানিস্তান সবেমাত্র কয়েক দশকের যুদ্ধ-সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার পথ ধরেছে।

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ