ডায়ালসিলেট ডেস্ক::ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গায় পৃথক অভিযান চালিয়ে দুই মানব পাচার চক্রের প্রধানসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এদের মধ্যে ৪ জন ভারতে এবং ৭ জন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মানব পাচারে জড়িত চক্রের সদস্য। কখনো সখ্য গড়ে, কখনোবা ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে বিদেশে নারীদের পাচার করে আসছেন তারা। শনিবার মিরপুরের র‌্যাব ৪ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গতকাল শুক্রবার রাতের অভিযানে ২৩ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশে চাকরিসহ নানা প্রলোভনে তাদের পাচার করা হচ্ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা ২২ নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে ও চুয়াডাঙ্গা থেকে উদ্ধার করা এক নারীকে ভারতে পাচার করা হচ্ছিল।
র‌্যাব বলেছে, তেজগাঁও ও উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মধ্যপ্রাচ্যে মানব পাচার চক্রের অন্যতম হোতা নুর-নবী ভূঁইয়াসহ (৪৪) ৭ জনকে। অন্যরা হলেন আবুল বাশার (৫২), আল ইমরান (৪১), মনিরুজ্জামান (৩৫), শহিদ সিকদার (৫৪), প্রমোদ চন্দ্র দাস (৬২) ও টোকন (৪৫)।এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ভারতে পাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে। তারা হলেন চক্রটির প্রধান কামরুল ইসলাম ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুল (৩৭), তার সহযোগী রিপন মোল্লা (২২), আসাদুজ্জামান সেলিম (৪০) ও নাইমুর রহমান (২৫)। অভিযানে ৫৩টি পাসপোর্ট, ২০টি মুঠোফোন, ৮ বোতল বিদেশি মদ, ২৩ ক্যান বিয়ার, দু’টি মোটরসাইকেল, একটি ল্যাপটপ ও একটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এই চক্রের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য দেশে সক্রিয়। ৫ বছরের বেশি সময় ধরে গৃহকর্মী, নার্স, রেস্তোরাঁকর্মীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োগ দেয়ার নাম করে নারীদের পাচার করে আসছে চক্রটি। তারা মূলত ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাচারের পর বিক্রি করে দিত। চক্রটি ৩০৩৫ জন নারীকে বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে।
ঢাকায় এই চক্র কয়েকটি ‘সেফ হাউস’ পরিচালনা করছিল বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন চক্রের সদস্যরা। তারা কয়েক ধাপে বিভিন্ন দেশে নারীদের পাচার করছেন। তাদের নিশানায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের তরুণী ও মধ্যবয়স্ক নারীরা রয়েছেন। চক্রের সদস্যরা প্রথমে তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন ও পরে বিদেশে বিভিন্ন লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখান।
চক্রের প্রধান নুর-নবী ভূঁইয়ার বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, নূরনবী লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯৬ সালে ঢাকায় এসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। ১৯৯৮ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে প্রবাসী কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ওমানে থাকা অবস্থায় পাচারকারী একটি চক্রের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। ২০২০ সালে ওমান থেকে দেশে ফিরে মানব পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়েন তিনি।
ভারতে নারী পাচারকারী চক্রের সদস্যদের বিষয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রের অন্যতম হোতা কামরুল ইসলাম। চক্রের সদস্য ১৫ থেকে ২০ জন। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি অল্পবয়সী নারীদের ভারতে পাচার করে আসছে। চক্রটি নাচ শেখানোর নামে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নারীদের ঢাকায় নিয়ে আসত। পরে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করত। এভাবে ভারতে শতাধিক নারীকে পাচার করেছে চক্রটি।
কামরুল ইসলাম সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, কামরুল ইসলাম ২০০১ সালে কুমিল্লা থেকে এসে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় রিকশা চালাতেন। পরে তিনি একটি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যানচালক হিসেবে কাজ করেন। ২০১৬ সালে চলচ্চিত্র অঙ্গনের ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ২০১৯ সালে হাতিরঝিল এলাকায় ‘ডিজে কামরুল ড্যান্স কিংডম’ নামে ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্লাবে নাচ শেখানো ও পরে ভারতে ভালো বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে নারীদের পাচার করা হতো।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *