ডায়ালসিলেট ডেস্ক:;অ্যান্টি-এজিং ভ্যাকসিন। যা নাকি রুখে দিচ্ছে বার্ধক্য। একটি পরীক্ষার পর দেখা গেছে এই ভ্যাকসিন সফলভাবে ইঁদুরের দেহ থেকে বার্ধক্য কোষগুলিকে নির্মূল করেছে। ইঁদুরের জীবনকে দীর্ঘায়িত করতে এবং বয়স-সম্পর্কিত রোগের কিছু লক্ষণকে দমাতে সহায়তা করেছে। গবেষকরা বলছেন যে, এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নতুন দরজা খুলে দিল। কিন্তু এটি কি সত্যিই কাজ করতে পারে মানুষের শরীরে? জৈব রসায়ন, আণবিক জীববিদ্যা এবং বায়োফিজিক্সের অধ্যাপক পল রবিনস বলেন, “আমি মনে করি ইঁদুরের দেহে এই পরীক্ষাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ … এটি আগামীদিনে গবেষণার আরো নতুন দিক উন্মোচিত করবে।” তত্ত্বগতভাবে, একই পদ্ধতি মানুষের মধ্যে কাজ করবে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো সেই ভ্যাকসিন মানুষের জন্য নিরাপদ হবে কিনা, প্রশ্ন তুলেছেন রবিনস। এ বিষয়ে আরো অধ্যয়ন করার এবং মানবদেহে পরীক্ষার আগে আরও কয়েকটি মনুষ্যেতর স্তন্যপায়ীর উপর এই পরীক্ষা চালিয়ে দেখা উচিত। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং (এনআইএ) অনুসারে, নতুন ভ্যাকসিনটি সেন্সেন্ট কোষগুলিকে লক্ষ্য করে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অত্যধিক চাপে বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে এই কোষগুলির স্থিতিস্থাপকতা (‘ইলাস্টিসিটি’) পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। তখন কোষগুলির আর বিভাজন হয় না। কিন্তু তারা মরেও যায় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সেনসেন্ট কোষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দেহে জমতে থাকে দ্রুত। কারণ শরীর থেকে এই ধরনের কোষগুলি পরিষ্কার করার জন্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন কমজোরি হয়ে পড়ে। এই সেনসেন্ট কোষগুলি তখন কাছাকাছি সুস্থ কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে সেনসেন্ট কোষের এই গঠন ক্যান্সার, আলজেইমার এবং এথেরোস্ক্লেরোসিস সহ অনেক বয়স-সম্পর্কিত রোগের জন্য দায়ী। গত এক দশক ধরে, বিজ্ঞানীরা “সেনোলাইটিক থেরাপি” বা ওষুধ তৈরি করার জন্য কাজ করছেন যা শরীর থেকে সেনসেন্ট কোষগুলি পরিষ্কার করতে পারে। এই ওষুধগুলির মধ্যে কিছু ওষুধ প্রদাহ কমিয়েছে, বয়স-সম্পর্কিত রোগের সূত্রপাতকে বিলম্বিত করেছে এবং ইঁদুরের জীবনকাল বাড়িয়েছে। রবিনস বলেন, এই ওষুধের কিছু নমুনা এবার মানবদেহে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য ব্যবহার করা হবে। সেনসেন্ট কোষগুলিকে টার্গেট করার জন্য ওষুধের পরিবর্তে একটি ভ্যাকসিন ব্যবহার করার সম্ভাব্য সুবিধা হল যে এই ভ্যাকসিন ৫০ বা তার বেশি বয়সী মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এরপর সেন্সেন্ট কোষের সন্ধান করতে একজন টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেমকে পরীক্ষা করে দেখা হবে , লক্ষ্য রাখা হবে ভ্যাকসিন কোষগুলিকে দেখা মাত্রই ধ্বংস করছে কিনা। অন্যদিকে সেনোলাইটিক ওষুধ সেবন করলে একজন মানুষকে কিছুদিন অন্তর অন্তর তা সেবন করতে হবে,কারণ সেনসেন্ট কোষগুলি খুব তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই অ্যান্টি-এজিং ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য, গবেষকরা সেনসেন্ট কোষগুলির জন্য একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন বেছে নিয়েছিলেন। টোকিওর জুনটেন্ডো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিনের পরিচালক ডঃ তোহরু মিনামিনো বলছেন , সমস্যা হল এই সেনেসেন্ট কোষগুলি দেহের সর্বত্রই তৈরি হয়। এক জায়গার সেনেসেন্ট কোষের সঙ্গে দেহের অন্য জায়গার সেনেসেন্ট কোষের আচার-আচরণে মিলও থাকে না।গবেষকরা একটি বিশেষ ধরনের সেনেসেন্ট কোষের উপর নজর রেখেছিলেন। যেগুলি তৈরি হয় ধমনী, শিরা ও রক্তজালিকার একেবারে ভিতরের দিকে থাকা এন্ডোথেলিয়াল কোষগুলিতে। এগুলিকে বলা হয়— সেনেসেন্ট ভাসক্যুলার এন্ডোথেলিয়াল কোষ।তার পর তাঁরা খুঁজে বার করেন সেই কোষগুলির উপরের স্তরে কোন প্রোটিনটিকে বেশি পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। কারণ, গবেষকরা চেয়েছিলেন সেই প্রোটিনটিকেই তাঁদের বানানো টিকার লক্ষ্যবস্তু করতে। গবেষকরা তেমন একটি প্রোটিন খুঁজে পান। যার নাম— ‘গ্লাইকোপ্রোটিন ননমেটাস্ট্যাটিক মেলানোমা প্রোটিন বি ’ (জিপিএনএমবি)। বার্ধক্যজনিত বেশ কয়েকটি জটিল রোগ, মেলানোমা-সহ কয়েক ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই প্রোটিনটিকে বেশি পরিমাণে সেনেসেন্ট কোষে জমতে দেখা যায়। পরীক্ষাটি চালানো হয় মধ্যবয়সি ইঁদুরের উপর, যাতে তাদের বার্ধক্য ও বার্ধক্যজনিত রোগের গতিতে লাগাম পরানো সম্ভব হচ্ছে কি না বোঝা যায়। দেখা গিয়েছে, টিকা ৯৫ শতাংশ সফল হয়েছে ইঁদুরের ক্ষেত্রে। তাদের টিকা দেওয়া ইঁদুরগুলিতে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেননি গবেষকরা। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিং (এনআইএ)’-এর বিজ্ঞানীদের ইঁদুরের উপর চালানো পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার এজিং’-এ। গত ১০ ডিসেম্বর। এবার এই গবেষকদল তাঁদের পরীক্ষাকে মানবদেহে করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মানবদেহে সেনসেন্ট সেলের সাব-টাইপ কতটা সমস্যা তৈরী করতে পারে তা এখনো জানেন না বিজ্ঞানীরা , তাই আরো বেশি সাবধানতা অবলম্বন করে পরীক্ষায় নামার পরামর্শ দিচ্ছেন রবিন্স। যদি আগামীদিনে পরীক্ষা সফল হয় তাহলে হয়তো রুখে দেয়া যাবে বার্ধক্য , চির তরুণ হওয়ার চাবিকাঠি চলে আসবে আপনার হাতের মুঠোয়।

ডায়ালসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *