Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

ডায়ালসিলেট ডেস্ক :: সুগন্ধা নদীর বুকে রাতের আকাশ লাল করে জ্বলে উঠতে থাকে লঞ্চটি। রাত ৩টার কিছু পর হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচি। একই সঙ্গে ধোঁয়ার গন্ধ নাকে এসে লাগছে আগুন। ঘুম থেকে উঠে ভয়ংকর এক বিভীষিকায় দিশাহারা সব যাত্রী।

 

 

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের তিনতলা লঞ্চটি ঘণ্টাখানেক চলে নদীর এক পারে গিয়ে থামতে, ততক্ষণে আগুন কেড়ে নিয়েছে শিশু, পুরুষ, নারীসহ অন্তত ৩৫ জনের প্রাণ। দগ্ধ হয়ে, লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন শতাধিক। আহত অনেকে হাসপাতালে নেওয়ার পরে মারা গেছে আরো তিনজন। নিহতদের সবার বাড়ি বরগুনা বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

 

 

গতকাল সেখানে স্বজন হারানো শত শত মানুষ ভিড় করে আহাজারি করেন। লাশের গন্ধ আর আহাজারিতে শোকের মরুতে পরিণত হয় সুগন্ধার তীর। দিনভর উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ৩৬ জনের লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ৭২ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও প্রবীণ। দগ্ধ হয়ে লাশ বিকৃত ও খণ্ডিত হওয়ায় স্বজনরা নিহতদের শনাক্ত করতে পারছেন না। বাকি লাশগুলো শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরে লাশগুলো গণকবরে দাফন করা হবে।

 

 

এটিই দেশে প্রথম ঘটনা যেখানে চলন্ত লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে এত মানুষের প্রাণহানি ঘটল। লঞ্চটিতে ৪০০ যাত্রী থাকার কথা কর্তৃপক্ষ বললেও প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলছেন, গাদাগাদি করে আট শতাধিক যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডে লঞ্চটিকে দ্রুত তীরে ভেড়ানোসহ যাত্রীদের রক্ষায় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।

 

 

এদিকে, ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকার পরও লঞ্চের আগুন কেন নেভানো সম্ভব হয়নি, কেনই বা এত প্রাণহানি- এসব প্রশ্ন উঠে আসছে বারবার। তবে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ পুরো ঘটনাটি রহস্য আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, নদীতে থাকা লঞ্চে এত সময় ধরে আগুন জ্বলেছে, দগ্ধ মানুষের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও তা নেভাতে তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি।

 

 

অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল কি না? যন্ত্র থাকলেই তো হবে না। সেগুলো কার্যকর ছিল কি না তা-ও দেখতে হবে। একই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত লোকজন ছিল কি না লঞ্চে? আবার সর্বশেষ কবে ফায়ার ড্রিল হয়েছে?

 

 

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রাত ৩টা ২৮ মিনিটে তাদের কাছে অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। তারা ৩টা ৫০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানো ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

 

 

এই অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করেন।

 

 

বেঁচে যাওয়া যাত্রী আব্দুর রহিম, শফিকুল ইসলাম ও রহমান গাজী জানান, ডেক থেকে তাঁরা হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান। তারপর লঞ্চের পেছন দিক থেকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে দেখেন। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন পুরো লঞ্চ গ্রাস করে। আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা ডেক থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা ট্রলার নিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। দিয়াকুল গ্রামের লোকজন নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে। তাঁদের মতো অনেককে উদ্ধার করে গরম কাপড়ে জড়িয়ে দেয়। এরপর সকালে তাঁদের দুজনকে ঝালকাঠি শহরে নেওয়া হয়।

 

 

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা লঞ্চ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে। তাঁদের চিৎকার শুনে গ্রামবাসী ছুটে আসে নদীতীরে। ঝাঁপ দেওয়া যাত্রীদের উদ্ধারে নামে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও সেখানে যান।

 

 

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন বলেছেন, ‘আমরা দুর্ঘটনায় নিহত সব পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। লঞ্চে আমাদের হিসাব মতে ৩৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল। তবে এর বেশি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে। তা ছাড়া লঞ্চের ফিটনেস ঠিক আছে বলে জানতে পেরেছি।’ অগ্নিদগ্ধ যাত্রীদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যালে দেখতে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *