ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: ৫০ বছর বয়সী মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আছালং ইসলামপুরে। ছেলে-মেয়ে-নাতির সাথে এবারের আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ২.১৪ পেয়ে তিনি প্রমাণ করলেন পড়াশুনার ক্ষেত্রে বয়স কোন বিষয় নয়। মানুষ চাইলেই যে কোন বয়সে পড়াশুনা করতে পারেন।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!তার ছোট মেয়ে মাহমুদা সিরাজ জিপিএ ৪-১৭ ও বড় মেয়ের ঘরের নাতি মো. নাজমুল হাসান জিপিএ ৪-৬৭ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন। এছাড়া তার একমাত্র ছেলে হাফেজ নেছারুদ্দীন আহমদ চট্টগ্রাম বায়তুশশরফ কামিল মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৪-০০ পেয়েছেন।
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর বাবা-ছেলে-মেয়ে-নাতির পাসের খবরে আনন্দের বন্যা বইছে সীমান্তঘেঁষা আছালং ইসলামপুর এলাকার মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বাড়িতে। এ সময় প্রতিবেশী ও স্বজনরা অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসেন তাদের বাড়িতে। কেউ কেউ নিয়ে আসেন ফুল ও মিষ্টি। তাদের সাফল্যে উচ্ছ্ব সিত স্থানীয়রাও।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৮৭ সালে তাইন্দং মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করেন। এরপর বৃদ্ধ মা-বাবার দেখভাল ও পারিবারিক প্রয়োজনে প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকলেও পাড়াশোনা এগিয়ে নিতে পারেননি। রাজনীতি ও সমাজসেবায় জড়িয়ে গেলে লেখাপাড়ায় মনোযোগ দিতে পারেননি। কিন্তু সবসময়ই লেখাপড়ার তাগিদ অনুভব করতেন। সে তাগিদ থেকেই ৫০ বছর বয়সেই মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন।
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করা ছোট মেয়ে মাহমুদা সিরাজ বাবার এ সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায় যে সাফল্য এনে দিতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত আমার বাবা। আমাদের ভাই-বোনের ফলাফলের চেয়ে বাবার ফলাফলে আমরা গর্বিত।
ছয় কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। দীর্ঘ বিরতির পর শেষ বয়সে এসে লেখাপড়ার তাগিদ অনুভব করলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হলে আগে নিজেকে শিক্ষিত হতে হবে। ফলাফল ঘোষণার পর ছেলে-মেয়ে আর নাতির সঙ্গে নিজের কৃতিত্বের খবর পাওয়ার সময়টা আমার জীবনের সবচেয়ে সুখকর মুহূর্ত। এটা কখনো ভুলার মতো নয়।
পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সবাই চাইছে আমি লেখাপড়া অব্যাহত রাখি।
পরীক্ষা দিতে গিয়ে বয়সের কারণে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন কি না জানতে চাইলে সিরাজুল বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে আমি সবার নানা ছিলাম। তবে সবাই আমাকে উৎসাহিত করেছে।

