ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: ‘একটি সংরক্ষিত বনকে সংরক্ষণের নামে বনের অভ্যন্তরে যে কোনো রকমের কর্মকাণ্ড বনের ধ্বংস ত্বরান্বিত করবে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। লাঠিটিলা বনে যে সাফারি পার্কের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা বিপন্ন সিলেটের বনাঞ্চলের অস্তিত্ব বিলীন করবে। কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মহলের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই বন বিভাগ এই প্রকল্পবাজী করছে।’
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারস্থ একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) উদ্যোগে ‘বিপন্ন লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলসহ বৃহত্তর সিলেটের বন ও জীববৈচিত্র্য’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলেনের সহ-সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম। মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিবেশ ও প্রকৃতি বিশেষজ্ঞ মোকাররম হোসেন। সিলেটের বন ও বন্যপ্রাণী বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ও লাঠিটিলা বিষয়ে প্রেজেন্টশন দেন ফরহাদ আহসান পাভেল, মুখ্য গবেষক, বাংলাদেশ লেসার এডজুটেন্ট কনসারভেশন প্রজেক্ট এবং কনজারভেশন অব হোলক গিবন ইন পাথারিয়া রিজার্ভ ফরেস্ট।
সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত ও সুন্দরবনবিনাশী ধ্বংসাত্মক শিল্পায়ন সরকারের উন্নয়ন দর্শনের ভ্রান্ত নীতির পরিচয় বহন করে। ভাষাকে ‘ভাষাসম্পদ’ উল্লেখ করে ত্যাগ এবং সংগ্রামের পরিচয় বহন করা এ জাতি বনসম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনে আত্মত্যাগ করবে।
ড. নজরুল ইসলাম ৭০ ও ৮০ দশকে দেখা জাফলংয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, জাফলংয়ের ধ্বংসলীলা দেখে মনে হয়েছে আমার দ্বিতীয়বার আসা ভুল ছিল। তিনি লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন রক্ষায় দেশে ও প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপর জোর দেন।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর উক্তি ‘আমরা গাছ লাগাইয়া সুন্দরবন পয়দা করি নাই’ উল্লেখ করে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, আর এখনকার নীতিনির্ধারকেরা সুন্দরবন তৈরি করতে চান। সাফারি পার্কের নামে বিদেশি প্রাণী নিয়ে আসা সাফারি পার্ক ধারণারও ব্যত্যয়। সংরক্ষিত বন সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প নয়, দৃঢ় পদক্ষেপ ও আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
গোলটেবিলে লাঠিটিলা রক্ষা আন্দোলন, লাঠিটিলা মঞ্চ ও লাঠিটিলা লং মার্চ সংগঠিত করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম শাকিলের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে বক্তব্য দেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. কামাল আহমদ চৌধুরী, বাপা সিলেটের সহ-সভাপতি ও শাবিপ্রবির লাইফ সায়ন্সের ডিন অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, শাবিপ্রবির সোশ্যাল সায়েন্সের ডিন অধ্যাপক দিলারা রহমান, শাবিপ্রবির পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জায়দা শারমিন সাথী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সিলেটের আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, উদীচী সিলেটের সভাপতি কবি এনায়েত হোসেন মানিক, ঐতিহ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ ট্রাস্ট সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জার্মান প্রবাসী লেখক শামছুল মজিদ চৌধুরী সাকি ও ডা. শাহজামান চৌধুরী বাহার, নিউইয়র্ক প্রবাসী সংগঠক রানা ফেরদৌস, বাপার জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ইমজা) সভাপতি মঈনুদ্দিন মঞ্জু ও ফাদার যোজেফ গোমেজ।
আরও বক্তব্য দেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ রেদওয়ান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডা. মোক্তার হোসেন, বাংলাদেশ নর্থ ইস্ট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষক তানভির আহমদ, মৌলভীবাজারের পরিবেশ সংগঠক আ স ম সালেহ সোহেল, সেইভ দ্য হ্যারিটেজের সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী, উন্নয়নকর্মী লক্ষ্মীকান্ত সিংহ, খাসিয়াদের সংগঠন কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জির সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং, দৈনিক দেশ রুপান্তর পত্রিকার মৌলভীবাজার প্রতিনিধি রিপন দে, লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকা থেকে আসা পরিবেশকর্মী তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *