ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: সিলেটে কানাডা-রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে প্রায় তিন শ’ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেই প্রতারক আমিনুর রহমান গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি নগরীর জিন্দাবাজারস্থ হক সুপার মার্কেটে অবস্থিত ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’র মালিক ও সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার নিজগাঁওয়ের তোফাজ্জল আলীর ছেলে। নগরীর শাহজালাল উপশহরস্থ জি ব্লকের ৪ নং রোডের ৯৬ নং বাসায় থাকতেন তিনি।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) বেলা ২টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানাপুলিশ। গ্রেফতারের বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলী মাহমুদ।
অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন আমিনুর রহমান। এ অভিযোগে আমিন ও তার দুই ভাইকে আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মানবপাচার ও প্রতারণা মামলা দায়ের করেন প্রতারিতরা। তাদের পক্ষ থেকে ফখরুল ইসলাম নামের একজন বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ হক সুপার মার্কেটে অবস্থিত ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’ নামক প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রতারক আমিনুর রহমান কানাডা ও রোমানিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে লোকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান।
ভূক্তভোগীরা জানান, ৯০ দিনের মধ্যে রোমানিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় ‘আমিন রহমান ট্রাভেলস’। ওই বিজ্ঞাপন দেখে তারা নগরীর জিন্দাবাজার হক সুপার মার্কেটস্থ ট্রাভেলসে যোগাযোগ করেন। তখন ট্রাভেলসের মালিক আমিনুর রহমান জানান, রোমানিয়ায় যেতে হলে ৬ লাখ টাকা লাগবে। প্রথমে বুকিং মানি হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ও ওয়ার্কপারমিট আসার পর দিতে হবে আরও ৫০ হাজার টাকা। বাকি ৫ লাখ দিতে হবে ভিসা হওয়ার পর। আমিনের কথামতো রোমানিয়ায় যেতে আগ্রহীরা তার সাথে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে টাকা দেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রোমানিয়ায় ফ্লাইট দেয়া শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন বিকেল ৪টা থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন তিনি। পরে অনেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের পাসপোর্টে লাগানো ভিসাও ছিল জাল। এছাড়া অনেককে ভিসা হওয়ার কথা বললেও তাদেরকে পাসপোর্ট ফেরত দেননি আমিন।
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গোটারগ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, চুক্তি অনুযায়ী ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি আমিনের হাতে তুলে দেন। তাকে ওয়ার্কপারমিটের কাগজ দেখিয়ে ট্রেনিংয়ের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তিও করেন আমিন। আগামী ৩ মার্চ তার ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে ভারতস্থ রোমানিয়া এম্বেসিতে ভিসার কপি পাঠান। তখন এম্বেসি থেকে জানানো হয়- ওই ভিসা নকল।
রুহুল আমিন আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি আমিন রহমান ট্রাভেলসের কর্মকর্তা রাজিবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- ভিসা সঠিক আছে। এম্বেসি অনেক সময় আসল ভিসাও জাল বলে থাকে। কিন্তু ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আমিনের মোবাইল বন্ধ পেয়ে তিনি বুঝতে পারেন- তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
মৌলভীবাজারের রাজনগরের মাহবুবুর রহমান মঞ্জু নামের এক প্রতারিত যুবক জানান, ঢাকা থেকে তার ফ্লাইট ছিল ২৪ ফেব্রুয়ারি। এজন্য তিনি আগের দিন ঢাকায় যান। কিন্তু বিকেল ৪টা থেকে আমিনের মোবাইল বন্ধ পান। তখন তিনি বুঝতে পারেন টাকা নিয়ে আমিন পালিয়ে গেছে। পরে হতাশ হয়ে সিলেট ফিরে আসেন। মঞ্জু জানান, তিনি বাড়ির জায়গা বিক্রি করে আমিনকে ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন রোমানিয়া যাওয়ার জন্য। প্রতারণার বিষয়ে তিনি এবং আরও কয়েকজন ভুক্তভোগী থানায় গেলেও পুলিশ মামলা না নিয়ে কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আমিন রহমান ট্রাভেলসের সামনে বিক্ষোভ করেন প্রতারিতরা। ট্রাভেলসের মালিক প্রতারক আমিন রহমানকে গ্রেফতার ও আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধারে তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এসময়। পরে শনিবার বিকেলে আমিন রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত করে আরও ২ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমিন রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রবিবার মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। মামলার বাদি হন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বানেশ্বরপুর গ্রামের মো. আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে ফখরুল ইসলাম। মামলায় আমিন রহমানকে প্রধান ও তার দুই ভাই সিদ্দিকুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় আসামি করা হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলী মাহমুদ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে বলেন, তাকে গ্রেফতার করে সবেমাত্র থানায় নিয়ে এসেছি। তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *