প্রকাশিত: ২:১৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২, ২০২২
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে (৩৫) সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার পর ৬ টুকরো করে লাশ গুমের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামির মধ্যে প্রধান আসামি জগন্নাথপুরের অভি মেডিকেল হল নামক ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইয়েদ মাহবুবুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে প্রধান আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক লিটন দেওয়ান। তিনি বলেন, শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জিতেশ চন্দ্র গোপ দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে সুনামগঞ্জ জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুর রহিমের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক লিটন দেওয়ান তিন আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে আদালত তাদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ৮ দিনের রিমান্ড শেষে গত রোববার দুপুরে জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহানের আদালতে হাজির করে আবারও তদন্তকারী কর্মকর্তা তিন আসামির আরও ৮ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তিন আসামির ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জগন্নাথপুরের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে কৌশলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর গভীর রাতে ফার্মেসির ভেতরে এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে তাকে ধর্ষণ করেন আসামিরা। ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ করার কথা বলায় শ্বাসরোধে শাহনাজকে হত্যা করে লাশ ৬ টুকরো করা হয়। পরে লাশ গুমের পরিকল্পনা করেন ধর্ষকরা। রাজধানী ও সুনামগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শাহনাজ হত্যার মূল তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টের ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের তালাবদ্ধ অভি মেডিকেল হল থেকে শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ভাই হেলালউদ্দিন বাদী হয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ মালিকানাধীন বাসায় ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তার স্বামী ছরকু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে চাকরি করেন। পরিবারের সব সদস্যদের ওষুধ ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের ফার্মেসি থেকে কেনার সুবাদে জিতেশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। শাহনাজ পারভীন কিছুদিন ধরে বেশ কিছু গোপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ সমস্যার সমাধানে সুপরামর্শের জন্য গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জিতেশের ফার্মেসিতে গেলে ফার্মেসির ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসাকক্ষে তাকে বসিয়ে রাখা হয়। রোগী ও ক্রেতাদের ভিড় কমলে তার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক ওষুধ তাকে দেওয়া হবে বলে সময়ক্ষেপণ করেন জিতেশ চন্দ্র গোপ।
তিনি তার দুই বন্ধু মুদি দোকানী অনজিৎ গোপ (৩৩) ও পাশের অরূপ ফার্মেসির মালিক অসিত গোপকে (৩৬) নিয়ে শাহনাজ পারভীনকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী জিতেশ শাহনাজ পারভীনকে চিকিৎসার কথা বলে ঘুমের ওষুধ খাওয়ালে তিনি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন তাকে ফার্মেসির ভেতরে রেখেই জিতেশ বাইরে তালা দিয়ে চলে যান। আশপাশের সব দোকান বন্ধ হলে গভীর রাতে ফার্মেসি খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এনার্জি ড্রিংকস পান করেন ওই তিনজন। এর পর তারা শাহনাজ পারভীনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারের সদস্য ও অন্যদের কাছে প্রকাশ করার কথা বললে আসামিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক তারা পারস্পরিক যোগসাজশে শাহনাজ পারভীনের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং বিশ্রামকক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে হত্যা করেন।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech