ডায়ালসিলেট ;:ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। এরই মধ্যে লন্ডনের ব্রেন্ট অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে প্রায় ১২০ ডলারে উঠেছে। গত সপ্তাহে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধি ঘটেছে। ট্রেডিং ইকোনমিকসের হিসাবে গত সপ্তাহে তেলের দাম ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয় ১১৮.১১ ডলার, যা ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ দাম। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট জ্বালানি তেলের দাম ৭ শতাংশের বেশি বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয় ১১৫.৬৮ ডলার, যা ১৪ বছরে সর্বোচ্চ হওয়ার পথে। ২০০৮ সালের ওই সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস তেলের দাম বেড়ে হয়েছিল ১১৬.৫৭ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যুদ্ধের প্রভাব জ্বালানির বাজারে কতটা গভীর হয় এ নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর অব্যাহত নিষেধাজ্ঞায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। সে কারণেই দাম বাড়ছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দ্বিতীয় বৃহৎ ও গ্যাসের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া। আর সৌদি আরব সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরাও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চাপ দিচ্ছেন। ইউবিএস-এর বিশ্লেষক জিওভানি স্টোনোভো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল আমদানি করে বৈশ্বিক হিসাবে তা সামান্যই মাত্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তেল আমদানি বন্ধ করলে অনেক দেশকেই তা হয়তো অনুসরণ করতে দেখা যাবে। এটা একটা উদ্বেগ তৈরি করছে।’ গত শুক্রবার ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সামনের নিষেধাজ্ঞায় ব্রিটেন রাশিয়ার জ্বালানি খাতকেই টার্গেট করবে। গত সপ্তাহে কানাডা রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ার তেলের বড় ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস। দেশটির ওপর আরো নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় অনেক পরিশোধন কম্পানি এরই মধ্যে তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক জরিপে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ আমেরিকান জানিয়েছে, তারা চায় যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করুক। এদিকে বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী থাকা জ্বালানি তেলের দাম কমাতে মজুদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) সদস্য দেশগুলো। বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে সম্প্রতি মজুদ থেকে ছয় কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে তারা। এর মধ্যে অর্ধেক তেল ছাড়বে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগ জানায়, আইইএর ৩১ সদস্য দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, ‘জ্বালানি বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। তাই আমাদের পুরো মনোযোগ চাহিদা পূরণ করার দিকে। ’ তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে সরবরাহ বিঘ্নতার এ পরিস্থিতি। তাই সদস্য দেশগুলো প্রয়োজন মনে করলে মজুদ আরো ছাড়বে বাজারে।’ সূত্র : রয়টার্স, এএফপি, ট্রেডিং ইকোনমিকস
ডাযারসিলেট এম/

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *