যুক্তরা‌জ্যের পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনটি সম্প্রতি নতুন করে নির্মিত হয়েছে। নতুনভাবে নির্মাণের পর ওই স্টেশনে লাগানো হয়েছে বাংলা হরফে সাইনবোর্ড।
যুক্তরাজ্যের কোনো স্টেশনে এই প্রথম বাংলায় সাইনবোর্ড টানানো হলো। এতে উৎফুল্ল সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা। এটি বাঙালির জন্য বড় অর্জন মনে করছেন তারা।
যুক্তরাজ্যে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করেন। এরমধ্যে সিলেট অঞ্চলের লোকজনই বেশি। হোয়াইটচ্যাপেলও বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা।
স্থানীয় বাঙালিরা জানান, বৃহস্প‌তিবার সকালে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলায় সাইনবোর্ড লাগানো হয়। ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে স্বাগতম, হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশন’ এরকম ৮/৯‌টি সাইন‌‌বোর্ড লাগা‌নো হয়েছে স্টেশনে।
ওই এলাকায় বসবাসরত সিলেটের বালাগঞ্জের নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার স্টেশনে গিয়ে বাংলায় সাইনবোর্ড দেখতে পাই, যা বাঙালি হিসেবে গর্বের।’
গত বছ‌রের ১৭ ডিসেম্বর লন্ড‌নের শ্যাডওয়েলের বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলায় সাইনবোর্ড স্থাপনের দাবি জানিয়ে লন্ডনের মেয়র, টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র, স্থানীয় এমপিসহ লন্ডনের পরিবহন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এই চিঠির উত্তর দেয় ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র জেরী হোয়াইট স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলেন, ‘আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর লেখা চিঠিসহ আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে এই দাবি উত্থাপিত হওয়ায় ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় স্টেশনের নাম লেখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। তারা সব পর্যায়ের কাজ শেষ করে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা স্টেশনের নাম লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এ ছাড়া ব্রিটেনের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিকী ‘জনমত’-এর পক্ষ থেকেও হোয়াইট চ্যাপল স্টেশ‌নের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখায় জন্য ক্যাম্পেইন চালানো হয়।
নিজের দাবি বাস্তবায়িত হওয়ায় খুশি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকে ভারতীয় অধ্যুষিত সাউথহল স্টেশনে হিন্দিতে স্টেশনের নাম লেখা রয়েছে। যা দেখে আমার মনে হয়, কেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকায় স্টেশনের নাম বাংলায় থাকবে না। এই পরই আমি দাবি জানিয়ে চিঠি দেই।’

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

কাইয়ূম বলেন, ‘এটি ব্রিটেনের প্রথম কোনো স্টেশন যেখানে বাংলায় স্টেশনের নাম হলো। টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন গিবসের আন্তরিকতার কারনেই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।’
তিনি জানান, বাংলায় লেখা সাইন‌বোর্ড বসাতে প্রায় ২০ হাজার পাউন্ট খরচ হ‌য়ে‌ছে। বৃহস্প‌তিবার সাইন‌‌বোর্ড লাগা‌নো হ‌লেও ১৫ মার্চ সকালে আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে উন্মুক্ত করা হ‌বে। লন্ড‌নের মেয়র ছা‌দিক খান, টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র জন বিগস ও ডেপু‌টি মেয়র আসমা বেগমের বাংলায় লেখা সাইন‌‌বোর্ড উদ্বোধন করার কথা র‌য়ে‌ছে।
ব্রিটেনে বাঙালির দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে উল্লেখ করে সেখানকার বাঙালি সাংবাদিক আ স ম মাসুম বলেন, ‘ব্রিটেনে বাংলা পত্রিকা বের হয় ১০৭ বছর আগে থেকে। ১৯৭৮ সালে আলতাব আলীর হত্যার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশিরা এখানে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।
‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে ভবিষ্যতে ক্রস রেল যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন ১ লাখ বিভিন্ন জাতিসত্তার যাত্রী এই স্টেশন ব্যবহার করেন। এই স্টেশনের সামনে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৪/৫ লাখ ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ চলাচল করেন। তাদের সামনে স্টেশনে লেখা বাংলা সাইনবোর্ডগুলো এখানকার বাংলাদেশিদের সুসংহত অবস্থা এবং ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের গৌরবের প্রতীক হয়ে উঠবে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *