ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি গ্রামে ফিরদি মিয়ার ঘরের পিছনের গর্ত থেকে গলাকাটা ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তার শিশু কন্যা ফাতেমা জান্নানত মৌ (৬) লাশ উদ্ধার হয়েছিল। সে কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

গত ৯ মার্চ বুধবার বিকেলে নিখোঁজের ২ ঘন্টা পর ঘরের পিছনের গর্ত থেকে ১ম শ্রেনির ছাত্রী ফাতেমা জান্নাতের গলাকাটা ও ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হওয়ার পর এ রাতে মা রুবি আক্তার বাদি হয়ে কমলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলেন। এ ঘটনার ৬দিন পরও পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরেজমিন ব্যাপক তদন্ত করেও হত্যার কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

এ অবস্থায় আতঙ্কে ৬ দিন ধরে কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি কমে গেছে। আতঙ্ক কাটাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও শিক্ষা বিভাগ সচেতনতামূলক প্রচারনা করলেও আতঙ্কে এ গ্রামে শিশুদের অনেকটা গৃহবন্ধী করে রাখছেন বাবা-মা।

লাশ উদ্ধারের রাতেই সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহীদুল হক মুন্সী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা চালান। রহস্য উদঘাটনে নিহত শিশুর মা, বাবা, বোন,ভাই ও ভাবীকে একাধিকবার পুলিশ ফাঁড়িতে এনে ও র‌্যাব শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাব করে গ্রামে ব্যাপক তদন্ত করেও গত ৬দিনে কোন রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। ফলে ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে কেছুলুটি গ্রামের বাবা-মা তাদের শিশু সন্তানদের বিদ্যালয়ে যেতে দিচ্ছেন না।

কেছুলুটি গ্রামের ব্যবসায়ী সুফি মিয়া ও গৃহবধু ডলি বেগম বলেন, ঘটনার মূল কারন বের না হলেও ও মূলআসামীদের গ্রেফতার না করায় গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মা ও বাবা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ও সকালে মক্তবে যেতে দিচ্ছেন না। অল্পহারে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয় ও মক্তবে গেলেও তাদের মা অথবা বাবা নিজে নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করে আবার বাড়ি ফিরিয়ে এনে বাড়িতে কড়া নজরদারিতে আটকিয়ে রাখছেন। তারা আরও বলেন, সন্ধ্যার পর বাড়ির দরজায় কেউ কড়া নাড়লে ও বা অতিথি এসে কড়া নাড়লে প্রথমে ভয়ে ঘরের ভেতর শিশুদের কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। পরে পরিচয় জেনে দরজা খোলা হয়।

কেছুলুটি গ্রামের সমাজ সেবক জাতীয় পার্টিও কমলগঞ্জ উপজেলা সভাপতি দুরুদ আলী বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ শিশু হত্যার কোন রহস্য উদ্ধার করতে না পারায় এক শ্রেণির প্রতারক গ্রামের সাধারণ মানুষজনের তালিকা তৈরী করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে দিচ্ছে। যাতে তাদেরকে সন্দেহের তালিকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফলে গ্রামে নতুন করে সাধারন মহলে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কেছলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার আহমেদ ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। আতঙ্কে না থেকে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে গ্রামে সচেতনতামূলক প্রচারনা চালাচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা জয় কুমার হাজরা বলেন, তিনি কেছুলুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনসহ গ্রামবাসীদের সাথে সচেতনতামূলক মতবিনিময়ও করেছেন।

শিশু হত্যাকান্ডের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা সুর্নির্দিষ্ট কারো সংশ্লিষ্টতা এখনও পাওয়া যায়নি, তবে পারিবারিক বিরোধ বা ব্যক্তিগত বিরোধসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জোর তদন্ত চলছে। এ জন্য শিশুর মা,বাবা,ভাই,বোন ও ভাবীকে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। তিনি আশাবাদি দ্রুত সময়ে এ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য বের হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *