চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগরে যে ট্রাকের চাপায় সোমবার ৫ জন নিহত হয়েছেন, ওই ট্রাকটি যিনি চালাচ্ছিলেন সেই রিপন মিয়া আদৌ কোনো চালক নন। এর আগেও তিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আহত হয়েছেন; যার ফলে তার এক পায়ে এখনো শক্তি কম। এক পায়ে শক্তি কম থাকার কারণেই বিআরটিসি তাকে ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেয়নি।
রিপন মিয়াকে আটক করার পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানিয়েছেন র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।
দুর্ঘটনার সময় ট্রাকটি বেশি গতিতে চলছিল আর এই গতির কারণেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ‘রং সাইডে’ গিয়ে ট্রাকটি প্রাইভেট কারকে চাপা দেয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
কর্নেল ইউসুফ বলেন, আজ ভোরে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকা থেকে রিপন মিয়াকে আটক করা হয়েছে। তার ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। তিনি ২০০৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এরপর থেকে অর্ধপঙ্গু অবস্থায় জীবন-যাপন করছিলেন তিনি। ডান পায়ে শক্তি পান না, এরপরও তিনি অবৈধভাবে ডাম্পার ট্রাক চালাচ্ছিলেন। রিপন মিয়ার কোনো পড়াশোনাও নেই।
চট্টগ্রামের ডবলমুরিং এলাকা থেকে রিপন মিয়াকে আটক করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার।
পাঁচটি তাজা প্রাণ যাওয়ার পর এখন যা বলছেন রিপন মিয়া
র‌্যাবের মাধ্যমে রিপন মিয়ার যে বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাকের আসল চালকের নাম নুরনবী। কয়েকদিন টানা কাজ করার কারণে ক্লান্ত ছিলেন তিনি। তারপরও ট্রাকের মালিক নুরনবীকে চট্টগ্রাম থেকে পেকুয়ায় পাথর নিয়ে যেতে চাপ দেন। নুরনবী তখন নিজে না গিয়ে সহকারী রিপন মিয়াকে ট্রাকটি নিয়ে যেতে বলেন। সে অনুযায়ী রিপন ট্রাকটি একাই নিয়ে যান। পাথর নামিয়ে ফেরার পথে প্রাইভেট কারটিকে চাপা দেন রিপন।
র‌্যাবকে রিপন মিয়া জানান, দুর্ঘটনার সময় ট্রাকটি থামানোর খুব চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ব্রেক কষার চেষ্টায় তিনি দাঁড়িয়ে পর্যন্ত যান, কিন্তু পায়ে তেমন শক্তি না থাকার কারণে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর মালিকের পাঠানো একটি গাড়িতে চড়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে যান তিনি। ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
সবার গাফিলতি ছিল
চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, সব লেভেলে গাফিলতি ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। মালিকের গাফিলতি হচ্ছে- আসল চালকের কাছে গাড়ি দেননি। আর আসল চালকের গাফিলতি হলো, তিনি হেলপারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়েছেন। তিনি জানতেন হেলপারের লাইসেন্স নেই। রিপনের পঙ্গুত্বের কারণে বিআরটিসি তাকে লাইসেন্স দেয়নি। তারপরও রিপন অবৈধভাবে গাড়ি চালিয়েছেন। আগেও কয়েকবার ছোট ছোট দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন তিনি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

সোমবারের এই দুর্ঘটনায় যে পাঁচজন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রিজভী সাকিব (২৪), হারুনুর রশিদ (৩০), সাইদুল (৩৩), ও সাদমান। গাড়িটি ছিল রিজভী সাকিবের। অনেক কষ্টে জমানো টাকায় দেড় মাস আগে গাড়িটি কেনেন সাকিব। বাকি চারজনকে নিয়ে ওই গাড়িতে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন তিনি।

এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। চালককে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে। পাশাপাশি ট্রাকের মালিক ও আসল চালককে এই মামলায় আসামি করার জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *