কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডে গৃহবধূ ইয়াসমিন আক্তারের (২১) মৃত্যুর নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) জানিয়েছে, ইয়াসমিনকে হত্যার পর লাশে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যান তাঁর স্বামী রেজাউল করিম।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা নগরের শাকতলা এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১–এর ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, ২০১৭ সালে রেজাউল করিম চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার ডিংগাভাঙা গ্রামে পেইজ নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। তখন ইয়াসমিন আক্তারের মা বেবী আক্তার সংস্থাটি থেকে ঋণ নেন। ঋণের কিস্তির টাকা আনতে গিয়ে বিবাহিত ইয়াসমিনের সঙ্গে রেজাউলের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি ইয়াসমিনের স্বামী জানতে পেরে তাঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর ধর্মীয় রীতিনীতি না মেনেই রেজাউল ও ইয়াসমিনের বিয়ে হয়। একপর্যায়ে রেজাউল মালদ্বীপ চলে যান। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি রেজাউল মালদ্বীপ থেকে দেশে ফিরে আসেন। ১০ জানুয়ারি ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দুজন আবার করেন। বিয়ের পর ইয়াসমিনকে কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের ডেউয়াতলি গ্রামে নিয়ে আসেন রেজাউল।
র‌্যাব আরও জানায়, অমতে বিয়ে করায় রেজাউলের পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। এবার রেজাউল যৌতুকের জন্য চাপ দেন ইয়াসমিনকে। এ নিয়ে দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ১০ মার্চ বিকেলে ইয়াসমিনকে চড় মারেন রেজাউল। সন্ধ্যা ৭টায় আবার দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। তখন রেজাউলের বাবা-মা দুজনকে শান্ত করেন। রাত ১০টার আগে রেজাউলের বাবা–মা পাশের ঘরে ঘুমিয়ে যান। এই ফাঁকে রেজাউল ক্ষুব্ধ হয়ে ইয়াসমিনের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর টানা সাত ঘণ্টা মৃত স্ত্রীর পাশে বসে ছিলেন। ১১ মার্চ ভোর ৫টায় ইয়াসমিনের মৃতদেহে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিদিনের মতো বাড়ির পাশে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে তিনি বাড়ির পাশের কবরস্থান জিয়ারত করেন। ঘরে আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনি আগুন নেভাতে যান। পরে ইয়াসমিনের লাশ উদ্ধার করে দাফন করা হয়। ঘটনার পর রেজাউল আত্মগোপনে যান। একই সঙ্গে বিদেশ যাওয়ারও পরিকল্পনা করেন।

মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ঘটনার পর ১২ মার্চ ইয়াসমিনের ভাই রাকিব হোসেন বরুড়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশ্ন তোলা হয়। র‌্যাব রেজাউলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁদের কথা অসংলগ্ন মনে হয়। পরে ২৮ মার্চ রাত ৯টায় রেজাউলকে কুমিল্লা ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর র‌্যাবের কুমিল্লা ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে রেজাউল হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন।
এ ঘটনায় করা মামলার বাদী নিহত ইয়াসমিনের ভাই রাকিব হোসেন বলেন, ‘শুরু থেকেই এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলি। কেউ আমাদের কথা শোনেনি। র‌্যাবকে ধন্যবাদ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য। এখন আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই। রেজাউলের ফাঁসি চাই।’

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *