প্রকাশিত: ১২:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২২
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার রায় আজ বুধবার প্রধান করা হবে। এদিন সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবুনালের বিচারক নুরুল আমীন বিপ্লবের আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।
হত্যাকান্ডের প্রায় ৭ বছর পর এই রায় প্রদান করা হচ্ছে। অনন্তের আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।
পেশায় ব্যাক কর্মকর্তা অনন্ত বিজয় বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতেন। যুক্তি নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন আর যুক্ত ছিলেন মুক্তমনা ব্লগের সাথে। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পুলিশের অভিযোগপত্র মতে, লেখালেখির কারণে উগ্রবাদী গোষ্ঠিই তাকে হত্যা করেছে।
অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য মোহাম্মদ মনির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বুধবার এই মামলার রায় প্রদান করা হবে। সকাল ১১ টার দিকে কোর্ট বসবে। এরপরই রায় দেয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা আসামিদের অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি রায়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
যেভাবে হত্যা :: ২০১৫ সালের ১২ মে, প্রতিদিনের মতো ওইদিনও অফিসে যাওয়ার জন্য সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা অনন্ত বিজয় দাশ। সিলেট নগরের সুৃবিদবাজারের দস্তিদার পাড়ায় তার বাসা। বাসা থেকে বের হয়ে মূল সড়কে আসার পরপরই আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাড়া করে তাকে। প্রাণভয়ে দৌড় দেন অনন্ত। বাড়ির পাশে দিঘীর সামনে যাওয়ার পরই দুর্বৃত্তরা নাগাল পেয়ে যায় তার। সেখানেই কুপানো হয় তাকে।
অনন্তের চিৎকার শুনে বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন বোন। তিনি কান্না করে অনন্তকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাহায্য প্রার্থণা করেন। কিন্তু ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে ভাইবোন মিলে অনন্তর ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে যান সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনন্ত হত্যার প্রতিবাদে পরদিন সিলেটের হরতাল ডাকে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে গঠিত এই মোর্চা।
মামলা, তদন্ত, বিচার :: হত্যাকা-ের পরদিনই অনন্তের বড় ভাই রতেœশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
প্রথমে মামলাটি পুলিশ তদন্ত করলেও পরে তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তরিত হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। এতে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্তরা হলেন, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ, কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন, কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ এবং সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান।
তাদের মধ্যে ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার দ-প্রাপ্ত আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক রয়েছেন।
এই মামলায় সাক্ষী ছিলেন ২৯ জন। তবে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারায় বারবার পিছিয়ে যায় মামলার শুনানি। অন্তত ১৫ দফা পেছায় মামলার শুনানি। এছাড়া করোনার কারণেও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো মামলার কার্যক্রম। অবশেষে মামলাটি দ্রুত শেষ করতে মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয় এর কার্যক্রম। এতে গতি আসে মামলার কার্যক্রমে।
সিলেটের সরকারি কেশৈলী নিজাম উদ্দিন বলেন, এই মামলার ৬ জন আসামীর মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। বাকী ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনজনকে পলাতক রেখেই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। বুধবার এই মামলার রায় প্রদান করা হবে।
সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি :: ছেলে হত্যার বিচার না দেখেই ২০১৭ সালের এপ্রিলে মারা যান অনন্ত বিজয় দাশের বাবা রবীন্দ্র কুমার দাশ। অনন্ত’র মা পিযুষ রানী দাশও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে তিনিও শয্যাশায়ী অবস্থায় আছেন।
বাবা না দেখে যেতে পারলেও ছেলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চান মা পিযুষ রানী দাশ।
অনন্তের বোন জামাই সমর বিজয় শী শেখর বলেন, ছেলে হত্যার বিচার না দেখে অনন্তের বাবা মারা গেছেন। মাও অসুস্থ। তিনি চান তার ছেলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আমাদেরও একই চাওয়া।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech