থাবল চুম্বা রোমাঞ্চকর নৃত্য ছিলো তরুণ তরুণীরা

প্রকাশিত: ৭:৪১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২২

থাবল চুম্বা রোমাঞ্চকর নৃত্য ছিলো তরুণ তরুণীরা

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: নিজস্ব সংস্কৃতির রিতিনীতি অনুয়ায়ী পরিপাটি আর্কষণীয় পোশাক। চোখ ধাঁধাঁনো নানা সাজসজ্জায় তরুণ তরুণীরা সমবেত। রংবেরংয়ের মরিচ বাতির আলোর জলকানি। নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে মন জুড়ানো আলোক সজ্জার বৃত্তাকার বেষ্ঠনি। ওই এলাকা জুড়ে আলো আধারের খেলায় এক অন্যরকম আবেশ। সমবেত নানা বয়সের সকলেরই অপেক্ষা অন্যান্য ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠানিকতা শেষে থাবল চুম্বা নৃত্যের। এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শুরু হলো তরুণ তরুণীর দীর্ঘদলবদ্ধ রোমাঞ্চকর সেই নৃত্য। মধ্যরাতে থাবল চুম্বা নৃত্যে বা চন্দ্রনী নৃত্যে উন্মাতাল ছিলো তরুণ তরুণীরা। প্রাণবন্ত এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করেন কয়েক সহস্রাধিক দর্শক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা বয়সের মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাগমে সরগরম ছিলো অনুষ্ঠানস্থল। মণিপুরীদের বর্ষবরণ ‘চৌরাওবা’ উৎসব জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্র এর সামনে তেতই গাঁও আদমপুর এলাকায় শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়ে চলে রাত প্রায় ২ টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠান আয়োজকরা জানান কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪ টি গ্রামের মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজন মিলে এবছর বর্ষবরণ ‘চৌরাওবা’ উৎসবের আয়োজন করেন।
কোভিড-১৯ এর কারণে গেল ২ বছর এরকম বড় পরিসরে অনুষ্ঠান করতে পারেন নি তারা। তাই এই ব্যতিক্রমী আয়োজন আর আনন্দ উৎসবে প্রাণবন্ত সবাই। শিক্ষক শান্ত কুমার সিংহ ও ভানুবিল মাঝের গাঁও কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম এর প্রতিষ্ঠাতা নিরঞ্জন সিংহ রাজু জানান ‘চৌরাওবা’ বা নর্ববর্ষ বরণ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও জাতীয় সংগীত এর মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ছিলো চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা,আলোচনা সভা,দেবতার প্রতি আরাধনা (শরোয় খানংবা)সহ দিনভর ছিলো নানা আয়োজন। আর শেষের দিকে রাতে ছিলো বিশেষ আর্কষণ থাবল চুম্বা বা চন্দ্রনী নৃত্য। নৃত্যে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী উদয় সিংহ,লেইরিক সিংহ,সানিয়া সিংহ ও এন সুমন নিতৈ বলেন দীর্ঘদিন পর এই উৎসব আয়োজন হচ্ছে সবাই একত্রিত হয়ে তা উপভোগ করছি এই আনন্দ অনুভূতি অন্যরকম। থাবল চুম্বা বা চন্দ্রনী নৃত্য যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীদের জীবনসঙ্গী খোঁজার এক ব্যতিক্রমী মাধ্যম। পুরো আয়োজনে চলে বিশেষ ধর্মীয় গান। সেই তালে দলবেঁেধ ছেলে মেয়েরা একে অন্যের হাত ধরেই চালায় উন্মাতাল নৃত্য। ওখানেই হয় পরিচয়। তারপর পরিণয়। জানাগেলো মনোমুগ্ধকর ব্যতিক্রমী এই উৎসবটি মুণিপুরীদের ধর্মীয় রীতিনীতির চলিষ্ণু ঐতিহ্য। বিশাল এলাকা জুড়ে চোখ ধাঁধানো গোলাকৃতির খোলা প্যান্ডেল। বর্ণিল সাজের ওই পরিপাটি আলো আধারের প্যান্ডেলটি তৈরী অন্যরকম মাধুর্যময়ী শৈল্পীকতায়।

দু’টি প্রবেশ পথের একটি ছেলেদের। আর অন্যটি মেয়েদের। দর্শকদের জন্যও আছে নির্দিষ্ট সীমানা। প্যান্ডেলের মধ্যখানের গোল বৃত্তে বসা শিল্পী ৯৫ বছর বয়সী শম্ভুরতন সিংহ,সাথে দুই শিল্পী মঙাংলৈমা চনু,নির্মলাদেবীসহ তাদের বাদক দল। ওই শিল্পীরা থাবল চুম্বা গানের উপর দেশ বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। মধ্য রাত থেকেই শুরু হয় ওই বিশেষ গান। দূর থেকে কানে ভাসে মাদকীয় সুরের গান ও বাদ্যযন্ত্রের সুর। ওই গান শোনে আবেগে আহ্লাদে মনের টানে মাঠে ছুটে আসেন মণীপুরী যুবক-যুবতী,কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সের লোকজন। কিশোর-কিশোরী,যুবক-যুবতী আর তরুণ তরুণীরা দলে দলে প্রবেশ করে বিশেষ ওই প্যান্ডেলে। ছোট ছোট শিশুরাও বাদ যায়নি। চলে উচ্চ সুর আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নিজস্ব ভাষায় নানা আবেগময়ীতার গান। সে সাথে চলে অংশগ্রহণকারী যুবক যুবতীদের উন্মাতাল নৃত্য। মণীপুরী নানা বয়সী ছেলে মেয়েরা ভাব বিনিময় করতে দল বেঁধে বাদ্যযন্ত্রের তালে নৃত্য করে উম্মোক্ত মঞ্চে। সুনিপুণ মনোমুগ্ধকর এ নৃত্য নানা বয়সী দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেন সৌন্দর্য আর্কষণে। আর বয়স্কজনরা ছুটেন স্মৃতি রোমন্থনে। নিজস্ব রীতিনীতি মেনে নৃত্যের কয়েকটি পর্বে অনুষ্ঠান চলে গভীর রাত পর্যন্ত। শেষ পর্বে কড়া নিয়ম রীতিতে হাতের বন্ধন শক্ত করে ড্রাগন আকৃতিতে সৃষ্টিকর্তার নামে ওইসব আয়োজন ও নৃত্য উৎসর্গ করা হয় ব্যতিক্রমী নৃত্যের মাধ্যমে। আয়োজকরা জানান বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রায় সহস্রাধিক যুবক যুবতী ও তরণ তরুণীরা থাবল চুম্বা নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। আর দর্শক ছিলেন প্রায় ৩ সহস্রাধিক। এটাই দেশের মধ্যে মণিপুরীদের সবচেয়ে বড় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ