স্পোর্টস ডেস্ক :: গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। আর অনিশ্চয়তার পরের কোনো ধাপ থাকলে সেটিই দেখা গেলো আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রাজস্থান রয়্যালসের মধ্যকার ম্যাচে। যেখানে বারবার পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি রাজস্থানের খেলোয়াড়দের মুখে।
মুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে জস বাটলারের রেকর্ড সেঞ্চুরির সুবাদে এবারের আসরের সর্বোচ্চ ২১৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করেছিল রাজস্থান। জবাব দিতে নেমে জয়ের পথেই ছুটছিল কলকাতা। কিন্তু ইয়ুজভেন্দ্র চাহালের হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেটের এক ওভারে বদলে যায় চিত্রনাট্য।
তবে ঠিক পরের ওভারেই ২০ রান নিয়ে ফের কলকাতার আশা জাগান উমেশ যাদব। শেষ পর্যন্ত আর পারেননি উমেশ। ইনিংসের ২ বল বাকি থাকতে কলকাতা অলআউট হয়েছে ২১০ রানে। নাটকীয়তায় ভরপুর ম্যাচটি ৭ রানে জিতে নিয়েছে আইপিএলের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা।
আইপিএল ইতিহাসের ২১৮ বা তার বেশি লক্ষ্য তাড়া করে জেতার রেকর্ড মাত্র দুইটি। তাই জয় পেটে ইতিহাস গড়তে হতো কলকাতাকে। কিন্তু সে লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম বলেই রানআউট হয়ে যান সুনিল নারিন। কোনো বল না খেলেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
এরপর রাজস্থানের বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন কলকাতার অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার ও অসি ওপেনার অ্যারন ফিঞ্চ। এ দুজনের জুটিতে মাত্র ৮.৫ ওভারে আসে ১০৭ রান। ইনিংসের নবম ওভারের শেষ দলীয় ১০৭ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে মাত্র ২৮ বলে ৫৮ রানের ঝড় তুলে যান ফিঞ্চ।
এরপর নিতিশ রানার সঙ্গে তিন ওভারে আরও ৪১ রান যোগ করেন শ্রেয়াস। চাহালের পাঁচ শিকারের প্রথমটিতে পরিণত হয়ে নিতিশ আউট হন ১১ বলে ১৮ রান করে। পরের ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন আন্দ্রে রাসেল। স্বদেশি নারিনের মতো তিনিও রানের খাতা খুলতে পারেননি।
অপরপ্রান্তে টপাটপ উইকেট পড়লেও রণে ক্ষান্ত দিতে রাজি ছিলেন না কলকাতার অধিনায়ক। মাত্র ৩২ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন জয়ের পথে। ইনিংসের ১৬ ওভারের মধ্যে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৮ রান করে ফেলে কলকাতা। ফলে শেষ ৪ ওভারে বাকি থাকে মাত্র ৪০ রান।
ঠিক তখনই দেখা যায় চাহালের ভেলকি। রান থামানোর পাশাপাশি উইকেট নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে বোলিংয়ে আনা হয় চাহালকে। অথচ তিনি নিজের প্রথম ৩ ওভারে দিয়ে ফেলেছিলেন ৩৮ রান। ফলে রাজস্থানের জন্য বড় এক জুয়াই ছিল এই ওভারটি।
সেই জুয়ায় একশতে একশ নম্বরই তুলে নিয়েছেন চাহাল। তিনি ওভারের প্রথম বলেই স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন দুই ওভার আগে উইকেটে আসা ভেংকটেশ আইয়ারকে। পরের দুই দেন একটি সিঙ্গেল ও একটি ওয়াইড।
পরে ওভারের চতুর্থ বলে নেন ইনিংসের সবচেয়ে বড় উইকেটটি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৫০ বলে ৮৫ রান নিয়ে খেলতে থাকা কলকাতার অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার আউট হন লেগ বিফোর উইকেটে। পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন শিভাম মাভি।
ওভারের পাঁচ বলে মাত্র দুই রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে তখন আকাশে উড়ছেন চাহাল। তবু বাকি ছিল আরও চমকের। হ্যাটট্রিক বলে তিনি প্যাট কামিন্সকে কট বিহাইন্ড করেই মাতেন উন্মাতাল উদযাপনে। মাত্র দুই রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচটি রাজস্থানের দিকে এনে দেন চাহাল।
মাখায়া এনটিনি ও প্রবীন তাম্বের পর কলকাতার বিপক্ষে তৃতীয় বোলার হিসেবে আইপিএলে হ্যাটট্রিক করলেন চাহাল। এছাড়া অজিত চান্দিলা, প্রবীন তাম্বে, শেন ওয়াটসন ও শ্রেয়াস গোপালের পর রাজস্থানের পঞ্চম বোলার হিসেবে এই কীর্তি দেখালেন তিনি।
চাহালের এই জাদুকরী ওভারের রেশ যাওয়ার আগেই নাটকের নতুন পর্ব দেখান কলকাতার পেসার উমেশ যাদব। কিউই তারকা পেসার ট্রেন্ট বোল্টের করা ১৮তম ওভারটিতে দুই ছক্কা ও এক চারের মারে ২০ রান তুলে নেন উমেশ। ফলে সমীকরণ নেমে আসে ১২ বলে ১৮ রানে।
অবশ্য সেখান থেকে আর কিছু করতে পারেননি উমেশ। প্রাসিদ কৃষ্ণা ১৯তম ওভারে দেন ৭ রান। শেষ ওভারে বাকি থাকা ১১ রান ডিফেন্ড করতে বোলিংয়ে আসেন ওবেদ ম্যাকয়। তিনি মাত্র ৩ রান খরচায় বাকি দুই উইকেট তুলে নিয়ে রাজস্থানকে এনে দেন নাটকীয় এক জয়।
এর আগে কলকাতার আমন্ত্রণে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৯.৪ ওভারে ৯৭ রান যোগ করেন দেবদূত পাড্ডিকাল ও জস বাটলার। যেখানে অবদান মাত্র ১৮ বলে ২৪ রান। আইপিএলে ১৫০তম ম্যাচ খেলতে নামা সুনিল নারিন ভাঙেন এই জুটি।
এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রানের গতি আরও বাড়ান বাটলার ও সানজু স্যামসন। এ দুজন মিলে ৫.৪ ওভারে গড়েন ৬৭ রানের জুটি। ইনিংসের ১৬তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ৩ চার ও ২ ছয়ের মারে ১৯ বলে ৩৮ রান করেন রাজস্থান অধিনায়ক।
স্যামসন ফিরে গেলেও চলতি আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিতে কোনো ভুল হয়নি বাটলারের। এর আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এছাড়া পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন গুজরাট টাইটান্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচে।
প্যাট কামিন্সের বলে আউট হওয়ার আগে বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৯ চার ও ৫ ছয়ের মারে ৬১ বলে ১০৩ রান করেন বাটলার। যার সুবাদে আইপিএলে সবশেষ সাত ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৪৯৯ রান হয় এ মারকুটে ব্যাটারের।
আইপিএল ইতিহাসে টানা সাত ম্যাচে এর চেয়ে বেশি রান করার নজির নেই আর কোনো ব্যাটারের। এর আগে ২০১৯ সালের আইপিএলে টানা সাত ম্যাচে ৪৯৭ রান করেছিলেন বাটলার নিজেই। এছাড়া আইপিএল ইতিহাসে মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে এক আসরে জোড়া সেঞ্চুরি করলেন তিনি।
বাটলার ফিরে যাওয়ার পর দলীয় সংগ্রহ বাড়ানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন ক্যারিবীয় তারকা শিমরন হেটমায়ার। শেষ দিকে ২টি করে চার-ছয়ের মারে মাত্র ১৩ বলে ২৬ রান করেন তিনি। যা রাজস্থানকে চলতি আসরে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ এনে দেয়।
রাজস্থানের এমন তাণ্ডবের দিনেও কলকাতার হয়ে ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন নারিন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *