প্রকাশিত: ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২২
ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর নেই। শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে তিনি ঢাকার বনানীর নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। মুহিতের ব্যক্তিগত সহকারি কিশোর ভট্টাচার্য জনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মুহিতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা, সকাল সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহিদ মিনারে নেয়া হবে। এরপর সিলেট আনা হবে তার মরদেহ।
আবুল মাল আবদুল মুহিত লিভার ক্যানসারে ভূগছিলেন। করোনার মধ্যে দেড় বছর আগে এই রোগ সম্পর্কে জানতে পারেন তিনি। বিষয়টি পারিবারিকভাবেই গোপন রাখা হয়। এরমধ্যে করোনায়ও আক্রান্ত হন মুহিত।
গত মার্চে জন্মভূমি সিলেট আসেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাকে গুণিশ্রেষ্ঠ সম্মাননাও দোয়া হয় তখন।
অর্থমন্ত্রী হিসাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেন, যার ১০টি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। তার ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে গত নির্বাচনে জয়ী হন ছোট ভাই ড. একে আবদুল মোমেন। এরপর একে আবদুল মোমেন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে।
মুহিত ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর রাজনীতি থেকে অবসর নেন।
এর আগে গত বছর করোনায় আক্রান্ত হন ৮৮ বছর বয়সী মুহিত। ওই বছরের ২৯ জুলাই তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তাকে ভর্তি করা হয়।
আবুল মাল আব্দুল মুহিতের জীবনী : ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া মুহিত তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ও বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের ১৪ সন্তানের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। পরের বছর একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন ভাষা আন্দোলনে। ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
বিদেশে চাকরিরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন তিনি। আর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।
১৯৫৬ সালে আবদুল মুহিত যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব হিসেবে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। অর্থনৈতিক পরামর্শক হিসেবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে যোগদান করেছিলেন। ছিলেন পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব। ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনের সময় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেন।
১৯৭১ সালে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়াশিংটন দূতাবাসে ইকনমিক কাউন্সেলরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ওই সময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। এছাড়াও, ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মুহিত।
১৯৮১ সালে আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছিলেন। এরপর তিনি ফোর্ড ফাউন্ডেশনের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছিলেন। আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থা বা ইফাদেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
১৯৮২-১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেনন মুহিত। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), আইডিবি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা ঐক্যজোটের মনোনয়নে সিলেট-১ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৯ জানুয়ারি ৬ তারিখে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর বাজেট উপস্থাপন করেছেন জাতীয় সংসদে।
২০২১ সালের ২৫ জুলাই আবদুল মুহিত করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত মার্চের শুরুতে আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কিছুদিন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ১৪ মার্চ সিলেট ঘুরে আসেন। সিলেট সিটি করপোরেশন ১৬ মার্চ তাকে ‘গুণী শ্রেষ্ঠ সম্মাননা’ দেয়।
সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক:
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মুহিত মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা ও বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে নেওয়া হবে।
এরপর দাফনের জন্য মরদেহ নেওয়া হবে সিলেটে। রায় নগরের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া মুহিত তার মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ও বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজের ১৪ সন্তানের মধ্যে ছিলেন তৃতীয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই।
Address: Kaniz Plaza, Zindabazar, Sylhet
United Kingdom, London Mobile :+447438548379
dialsylhetnews@gmail.com
Design and developed by AshrafTech