মৌলভীবাজারে ঘুষ বাণিজ্য বিদ্যুৎ অফিসে: জেলা জুড়ে চরম দূর্ভোগ  বিদ্যুৎ গ্রাহকরা

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২২

মৌলভীবাজারে ঘুষ বাণিজ্য বিদ্যুৎ অফিসে: জেলা জুড়ে চরম দূর্ভোগ  বিদ্যুৎ গ্রাহকরা

ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বিদ্যুৎ বিল,মিটার,লাইনমেরামত। সবকিছুতেই নানা কায়দা কৌশলে নয় ছয় আর ঘুষবাণিজ্য। চলমান এই গ্রাহক হয়রানীর গুরুতর অভিযোগের সাথে গেল কয়েক সপ্তাহ থেকে নতুন সংযোজন ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট। কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্য আর বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে জেলা জুড়ে এখন চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।

জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও কারণে অকারণে বিদ্যুৎহীনতা যেনো রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ঝড় বৃষ্টি আর লোকবল সংকটের অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের থাকলেও অনেক সময় ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। আকাশে বিজলী চমকালেই বিদ্যুৎহীন অন্ধকার। জেলাশহরসহ প্রতিটি উপজেলার নাগরীকরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে তাদের দূর্ভোগের বিষয়ে অভিযোগ দিলেও মিলছেনা প্রতিকার।

পবিত্র রমজান মাসে সেহরী,ইফতারী ও তারাবীর নামাজের গুরুত্বপূর্ণ সময়েও থাকছেনা বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের এমন উদাসীনতার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকার পর এবার মাঠে আন্দোলনে নামছেন উপকারভোগী দূর্ভোগগ্রস্থরা। হঠাৎ এমন দূর্ভোগে দিশেহারা জেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। দীর্ঘদিন কোভিট-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা ঈদকে সামনে রেখে কিছুটা উজ¦ীবিত হয়েছিলেন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের এমন আচরণে হতবাক। একই অবস্থা শিক্ষার্থীদের। গ্রাহকরা ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করে বলেন এমনিতে ভৌতিক বিল আর মিটার সংযোগের মাধ্যমে তাদেরকে চরম হয়রানী করা হচ্ছে। বাড়তি উৎকোচ দিলে সব সমস্যা সমাধান হচ্ছে। তা না হলে মামলা ও জেল জুলুমের ভয় দেখানো হচ্ছে এমনকি মিথ্যা মামলায়ও জড়ানো হচ্ছে।

কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দরা জানান প্রায় একযুগেরও বেশি সময়ের সংযোগবিহীন অচল মিটারে ভৌতিক বিল দেখিয়ে তিন মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের উপর মামলা করা হয়েছে। একাধিক ভোক্তভোগীরা জানালেন কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিপনণ কেন্দ্রের ৩ জন কর্মকর্তা (নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণী, সহকারী প্রকৌশলী মফিজ আলী, ক্যাশিয়ার আনছার আলী ও ১ জন কর্মচারীর (লাইনম্যান) যোগসাজসে নতুন মিটার দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। কিন্তু কয়েক মাস ও বছর অতিবাহীত হলেও তাদেরকে দেওয়া হচ্ছেনা মিটার। অথচ প্রতি মাসে কাগজের বিল দেওয়া ছাড়াই নগদ টাকা নিচ্ছেন। বিলের কাগজ ছাড়া কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মিটার বিহীন বিদ্যুৎ জ¦ালানোর দ্বায়ে তাদেরকে জেল জরিমানও গুনতে হচ্ছে। এছাড়া গেল কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

জানা যায় জেলার বড়লেখা উপজেলা নাগরীক সমাজের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে জেলা প্রশাসক বরবার স্মারক লিপি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায়ও বিদ্যুতের ঘনঘন বিভ্রাট নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে বিষোদগার করে দ্রুত প্রতিকার চাওয়া হয়। একই অবস্থা ও দৃশ্য জেলার জুড়ী,রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর,কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলসহ ৭টি উপজেলার। নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে বিদ্যুৎ বিভাগের (পিডিবি ও পল্লীবিদ্যুৎ) চরম উদাসীনতার বিষয়টি উপজেলার আইনশৃঙ্খলার সমন্বয় কমিটির সভায় জোরালো উপস্থাপন হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদানে সংশ্লিষ্ট কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ব্যানারে ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্ণিনীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ,ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে নানা আল্টিমেটাম দেন। তারা বলেন এইসকল সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে নানা কঠোর আন্দোলন নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকবেন। তারা বলেন বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু দুর্ণিনীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা তাদের ব্যক্তি স্বার্থে গ্রাহক হয়রানীর মাধ্যমে বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করতে গ্রাহকদের সমস্যায় ফেলছে। সরকারের সফল উদ্যোগ ও নিরবিচ্ছিন্ন সেবা জনগণের দূরগোড়ায় না পৌঁছিয়ে দূর্ভোগে ফেলছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিপনণ (বড়লেখা,জুড়ী ও কুলাউড়া) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ওসমান গণী মুঠোফোনে বলেন গ্রাহকদের সব অভিযোগ সঠিক নয়। ঝড় বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে (মাত্র তিনজন) কম লোকবল নিয়ে পুরো উপজেলা কিছুটা সমস্যা লাইন মেরামত করে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে। তিনি বলেন শিগগিরই কুলাউড়ার উত্তর কুলাউড়ায় আরও একটি ৩৩/১১ হাজার কেবির সাবষ্ট্রেশন নির্মাণ হচ্ছে। এটা নির্মাণ হলে এই দূর্ভোগ থাকবেনা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার এর তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী (মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ দায়িত্বে) এস এম ইকবাল বলেন পুরো জেলায় সব জায়গায় আমাদের বিভাগের না। ওখানে পল্লীবিদ্যুতও সেবা দিচ্ছে। গেল ১০ দিন থেকে ওই সমস্যা হচ্ছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে।

মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো: সাখাওয়াত জানান মৌসুমী আবহাওয়ার কারণে এমটি হচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলায় হাওর,পাহাড়,টিলা আর গাছগাছালি বেশি। বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি ঝড় তুফানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এগুলো মেরামত করে লাইলন সচল করতে হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি ও মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সাবেক সভাপতি ডা: ছাদিক আহমদ বলেন সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় গ্রাহক দূর্ভোগ কোনো ভাবেই কাম্য। তিনি দ্রুত এ সমস্যা উত্তোরণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা না পাওয়া নিয়ে দূর্ভোগগ্রস্থ গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও আমাকে জানিয়েছেন। আমি সংশ্লিষ্টদের এবিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি যাতে কোনো গুরুতর কারণ ছাড়া পবিত্র রমজানে বিদ্যুহীনতায় মানুষের যাতে দূর্ভোগ না হয়।

0Shares

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ