তোফায়েল পাপ্পু, দুবাই থেকে:  ২০২১ সালের ৬ মে প্রবাসের মাটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে পা রেখেছিলাম।  লেখাটি কার কাছে কেমন লাগবে জানিনা।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

প্রবাস জীবনের নানান সঞ্চিত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল ১টি বছর। হিসাব নিকাশ যদি করি তবে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি ছাড়া কম না। দেশে থাকতে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেকের সাথে পরিচিত হয়েছি অনেকের কাছে স্নেহের পাত্র হয়েছি। এই একটা বছরে আমি হারিয়েছি অনেক আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছি  আমার কিছু পরিচিত  মুখ। হারিয়েছি অনেক প্রিয় মানুষজন। যাদের জীবনে আর দেখা পাবো না। হবে না তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ।

প্রিয় মানুষগুলো আমাকে তারা আর কোনদিন জিজ্ঞেস করে বলবে না তোফায়েল পাপ্পু কেমন আছো?  কই তোমাকে দেখা যায় না,  তোমার পড়াশুনা কাজকর্ম কেমন চলছে? একবার দেখা করো সময় করে এসো।  তাদেরই পথ ধরে আমরাও হাটছি, আমাদেরও শেষ হবে জীবনের শেষ নি:শ্বাস।

দিন চলেই যাচ্ছে স্রোতের মত। প্রবাসে আসর কয়েক মাস পর প্রিয় একজন মানুষ সম্পর্কে আমার নানা হন। তিনি মারা যান।  আমাকে নিজের নাতীর মতই দেখতেন। আমি ও আমার বোনদের খুব আদর করতেন। হঠাত করে চলে গেলে আমাদের ছেড়ে। আল্লাহ যেন ওপারে উনাকে ভালো রাখেন।

কয়েকজন প্রিয় মানুষদের কথা উল্লেখ না করে পারলাম না।

গেল বছরের ৮ জুলাই সকালে ফেইসবুকে লগ ইন করা মাত্রই দেখলাম আমাদের শ্রীমঙ্গল শহরের পরিচিত মুখ দৈনিক খোলা চিঠি পত্রিকার সাবেক সম্পাদক, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ, আমার প্রিয় মানুষগুলোর মধ্যে একজন মো. সরফরাজ আলী বাবুল চাচা এই পৃথিবীর সমস্ত মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমিয়েছে সেই পরপারে।

উনার মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমি কিভাবে আমার মনকে শান্তনা দিবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। অনেককে ফোন করে খোঁজখবর নিলাম উনার মৃত্যুর খবর শুনে খুবই কষ্ট লাগলো। তিনি খুব মজার মজার গল্প বলতেন, সব সময় হাসিখুশি মেজাজে কথা বলতেন। মাঝে মাঝে আমি ও প্রথম আলোর শিমুল তরফদার ভাই উনার কাছে গেলে কত হাসি ঠাট্টামি করতেন। অনেক সময় সন্ধ্যায় ফোন আমাদের ডাকতেন। আমি যুগান্তরের সালাউদ্দিন ভাই, মানবকন্ঠের বাবলা ভাই, প্রতিদিনের সংবাদের আব্দুস শুকুর ভাই ষ্টেশন রোডস্থ উনার অফিসে গিলে দীর্ঘ সময় চলে যেতো কত গল্প স্বল্প করতেন খুবই ভালো লাগতো। সেই সময়গুলো আর আসবে না। উনার সাথে আর কথা হবে না। আর উনি ফোন করে ডাকবেন না। খুবই কষ্ট হচ্ছে।

ঠিক দু’মাসের মাথায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গলের আরও একজন পরিচিত মানুষ সকলের প্রিয় ব্যাক্তি শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি ও শ্রীমঙ্গল টি হ্যাভেন রিসোর্ট এর চেয়ারম্যান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাদা মনের মানুষ আবু সিদ্দিক মো. মুসা আংকেল আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।  উনার মৃত্যুর খবর শুনে আমার মন একদম ভেঙ্গে পরে। উনার মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমি নিজে বোকা হয়ে যাই। হঠাত করে সদা হাস্যোজ্জ্বল, অমায়িক, বন্ধুবৎসল, নিরহংকারী, শান্তশিষ্ট মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাবতেই অবাক লাগে। হাসি-খুশি ছাড়া তিনি কথা বলতেন না। তার আচার-ব্যবহারে আজও মুগ্ধ শ্রীমঙ্গলের মানুষ।   উনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন, উনার কোন প্রোগ্রাম হলে আমাকে ফোন করে বলতেন ‘ভাতিজা কিতা খবর? কই আছো? আমার প্রোগ্রাম আছে তুমি আইও সাথে কেউ থাকলে লইয়া আইও। এই প্রিয় মানুষটিকে আর দেখতে পাবো না, উনি তো আর ফোন করবেন না। উনি বেঁচে নেই মনে হলে বড় কষ্ট হয়।

মুসা আংকেলের মৃত্যুর তিন মাস পর গত ২৮ ডিসেম্বর চলে গেলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদ হোসেন ইকবাল চাচা। উনার সাথেও চাচা ভাতিজার মত সম্পর্ক ছিলো। যেখানে দেখা হতো উনি হাত তুলা দিয়ে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করতেন। খুবই ভালো লাগতো। এই সদালাপী, নিরাহংকার, জনসেবক ও অসাধারণ মানুষটি এভাবে চলে যাবেন তা কেউ কল্পনাও করেনি। খুব সাদামাটা জীবন কাটাতেন তিনি। মানুষের হৃদয় জুড়ে রয়েছে তার অফুরন্ত ভালোবাসা।

এই প্রিয় মানুষগুলোর মৃত্যুর কথা মনে পড়লে তখন নিজের কাছে মনে হয় ভালো মানুষেরা হঠাত করেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান। রেখে যান হাজারও স্মৃতি। ভালো মানুষ কখনো মরে না পৃথিবী যতদিন থাকবে তাদের কর্মের মধ্যে তারা বেঁচে থাকবেন।

এরকম আরও অনেক প্রিয় মানুষজনকে হারিয়েছি। তাদের কথা মনে পড়লে খুবই মন খারাপ হয়। পরপারে আল্লাহ সকলকে ভালো রাখুক।

আগামী দিনগুলোতে আরও কত আপনজন কত প্রিয় মানুষ মানুষকে হারাবো জানিনা। যারা বেঁচে আছেন আল্লাহ যেন সকলকে নেক হায়াত দান করেন। সকলের জন্য শুভ কামনা।

প্রবাসে যতই ভালো বা আরামদায়ক কাজে থাকা হোক না কেন কখনো শোকে পাথর হয়ে থাকতে হবে এই প্রবাসে। শুধু যন্ত্রণা আর জ্বালা ছাড়া কিছু দেয় না এই পরদেশের মাটি।

নিজদেশে হয়তো ভাগ্য বদলাতে পারবে না বলে বিদেশে পাড়ি দেয় আমার মত শতশত বাঙালি। ঘর হারিয়ে, কূল হারিয়ে, আপনজন হারিয়ে আজ নিঃশ্ব তারা। তারপরও কষ্টের কথা বুকে চেপে চলতে হয় এই প্রবাসে।

আজ এ দিনে স্মরণ করছি আমার আব্বুকে আমার মা কে। তাদের জন্য আজ আমার এতদূর আসা। আগামীর পথ চলা। তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তারা যেন দীর্ঘজীবী হন আর নেক হায়াৎ আল্লাহ দান করেন। সকল বিপদ আপদ থেকে আল্লাহ যেন হেফাজত করে তাদের।

প্রবাসে বন্ধু, ভাই, আপন পর সবার জন্য সব সময় শুভ কামনা। আল্লাহ সকলকে ভালো রাখুক। এই কামনা করি সব সময়।

তোফায়েল পাপ্পু

দুবাই

হ্যোয়াটস আপ নাম্বার: +৯৭১৫২৩৭৩৭৬৬৪

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *