ডায়াল সিলেট ডেস্ক ::  কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের কটারকোনা গ্রামের লুৎফুন বেগম। ১১ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মারজানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। বাড়ির পাশে নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়েছিল ছেলে মারজান। সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি মারজানেরঅনুসন্ধানে জানা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা মনু নদীর তীরবর্তী গ্রাম কটারকোনা। এ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের আতঙ্ক এখন বালুমহাল। দীর্ঘ এক যুগ ধরে নদীগর্ভ থেকে উচ্চ শব্দযুক্ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক, সেতু, নদীবাঁধ, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষিজমি। এক সময়ের আশীর্বাদ নদী এখন হয়ে উঠেছে দুর্ভোগের কারণ। এ বালু সিন্ডিকেটে প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকার কারণে বারবার প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়ে কোনো সুফল পাচ্ছেন না গ্রামবাসী। বিশেষ করে বালু ঘাটের পার্শ্ববর্তী নয়াবাজার কৃঞ্চ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীসহ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। বালুমহালের ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন করা গর্তে পড়ে মারা যায় মারজান। এদিকে স্বামীর বাড়ির লোকজন মারজানের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন মারজানের মা লুৎফুন বেগমকে। এ  নিয়ে স্বামীর বাড়ির সঙ্গে লুৎফুন ও তার পরিবারের মনোমালিন্য হয়।  এরপর আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে পারেননি লুৎফুন বেগম। এ বিষয়ে সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসী। সরেজমিন জেলার কুলাউড়া উপজেলার কটারকোনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের সড়কে যাতে ট্রাক প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বাঁশ দিয়ে আটকে দিয়েছেন স্থানীয়রা। সুমন আহমদ বলেন, গ্রামবাসীর দাবি- এ বালু উত্তোলন বন্ধ হোক। ব্রিজের খুব কাছ থেকেই বালু তোলা হচ্ছে। যার কারণে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।এ সময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বালবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে বাঁধের ওপর নির্মিত সড়ক ভেঙে গেছে। যা এখন মানুষের চলাচলের অনুপযোগী। বাঁধে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় গর্ত। দিনরাত অনবরত চলা নদীর ড্রেজার মেশিনের কম্পন আর বায়ুদূষণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। কারও ঘরে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। আবার কারও কৃষি জমি ভেঙে চলে গেছে নদীতে। পাশেই অবস্থিত নয়াবাজার কৃষ্ণচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। সেখানেও শিক্ষার্থীরা শব্দদূষণের কারণে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না। গ্রামীণ ছোট রাস্তা দিয়ে বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতে পারে না। জুলেখা বেগম বলেন, শিশুরা চলাচল করতে পারে না। সবদিকেই আমরা সমস্যাগ্রস্ত। মেশিন রাতেও চলে, দিনেও চলে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি ২৪ ঘণ্টাই যায়। আবদুল গফফার বলেন, আমাদের এলাকা থেকে তারা জোরপূর্বক বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বলে চাঁদাবাজির মামলা দেবে। ধুলো-বালুতে অতিষ্ঠ আমরা। আমার ঘরের সঙ্গেই মেশিন। দিনরাত মেশিনের শব্দে ঘরে বসা যায় না। সুলতান মিয়া বলেন, গত ৩০ বছর আমাদের গ্রামের রাস্তায় কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। বালু উত্তোলনের কারণে এলাকার শিশু মারা গেছে। তারা যা মনে চায় তাই করছে। কেউ অসুস্থ হলে যে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাব সেই সুযোগটাও নেই।ময়মুন বেগম বলেন, আমার ভাতিজি তার ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছিল। বাচ্চাটা নদীতে খেলা করতে গেলে বালুর স্তূপের গর্তে পড়ে মারা যায়।বালুমহালের অংশীদার রোমান আহমেদ বলেন, এ রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচল নতুন কিছু নয়। ট্রাক চলাচলের কারণে স্থানীয়দের কোনো অসুবিধা হয় বলে আমি মনে করি না। বরং আমরা প্রতি বছর রাস্তা মেরামত করি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *