মনজু চৌধুরী॥ মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার খলিলপুর ইউনিয়নস্থ খঞ্জনপুর গ্রামে জনৈক জাহাঙ্গীর আলম এর মালিকানাধীন ইমাদ ভ্যারাইটিজ ষ্টোর এর সামনে বারান্দার উপর কাগজের কার্টুনের ভিতর হাত-পা রশি দিয়ে এবং মুখমন্ডল সাদা পলিথিন দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় একজন অজ্ঞাতনামা পুরুষ বয়স (৫৫) এর লাশ ফেলে যায়। ওই অজ্ঞাতনামা লাশের ২৪ ঘন্টার মধ্যে পরিচয় খুঁজে বের করা ও হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
হত্যাকা-ে জড়িত তিন আসামীকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, একজন আসামীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
পুলিশ জানায়, ৫ জুলাই তারিখ রাত আনুমানিক ২.৩৫ ঘটিকার সময় শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ইফতেখার ইসলাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, কার্টুনের ভিতর হাত-পা রশি দিয়ে এবং মুখমন্ডল সাদা পলিথিন দিয়ে প্যাঁচানো একটি লাশের খবর। তাৎক্ষনিক উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন এবং ঘটনার সত্যতা যাচায়ের জন্য বর্ণিত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা পান। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল মোঃ জিয়াউর রহমান এবং অফিসার ইনচার্জ সদর মডেল থানা, মোঃ ইয়াছিনুল হক সংগীয় অফিসার/ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ নাম ঠিকানা সংগ্রহের নির্দেশ প্রদান করেন এবং যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কার্যক্রম শুরু করেন।
এসআই ইফতেখার ইসলাম অজ্ঞাতনামা লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেন। প্রেরিত লাশের ময়না তদন্ত শেষে লাশের কোন ওয়ারিশ বা উপস্থিত লোকজন লাশ সনাক্ত করতে না পারায় লাশের দাফনের নিমিত্তে মৌলভীবাজার পৌরসভা বরাবর প্রেরণ করলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার উক্ত অজ্ঞাতনামা লাশের দাফন সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিগন পরষ্পর যোগসাজসে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে খুন করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বর্ণিত ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যায় মর্মে এসআই ইফতেখার ইসলাম মৌলভীবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) মোঃ মশিউর রহমান এর উপর অর্পন করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া মহোদয়ের নিদের্শনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় (ক্রাইম এন্ড অপস) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জিয়াউর রহমান, সদর সার্কেল, মৌলভীবাজারের প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে ও তদারকিতে অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়াছিনুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ তদন্ত টীম ২৪ ঘন্টার মধ্যে উক্ত ক্লু-লেস লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে সক্ষম হন।
তদন্তকালে পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ মশিউর রহমান অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য বেতার বার্তা সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন দত্তগ্রাম সাকিনের মৃত আয়না মিয়ার ছেলে আইয়ুব আলী (৫৫) মর্মে সনাক্ত হয়। ভিকটিম আইয়ুব আলীর আত্মিয়-স্বজন এবং দত্তগ্রামের অন্যান্য লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় উল্লিখিত হত্যাকা-ের ঘটনার সাথে জনৈক মনসুর রহমান, অনুপ দাস সহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিগনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলে তথ্য প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে বিশেষ পুলিশি অভিযান পরিচালনা করে দত্তগ্রাম এলাকা হতে সন্দিগ্ধ আসামী মনসুর রহমান(৩০), পিতা-মৃত শফিকুর রহমান এবং অনুপ দাস (৪০), পিতা-মৃত অহি ভোষন দাস, উভয় সাং-দত্তগ্রাম, থানা-নবীগঞ্জ, জেলা-হবিগঞ্জদ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়।
হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষে গ্রেফতারকৃত সন্দিগ্ধ আসামীদ্বয়কে নিবিড় এবং কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামীরা জানায় যে, ভিকটিম আইয়ুব আলীর সাথে টাকা পয়সার লেনদেন এবং পুর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ডটি গত ৪ জুলাই রাত আনুমানিক ১০ ঘটিকার সময় আসামী মনসুর,অনুপ দাস ও পলাতক আসামী ইকবাল হোসেন মিলে সংঘঠিত করেছে। পরবর্তীতে ৭ জুলাই শুত্রুবার গ্রেফতারকৃত আসামী মনসুর রহমান (৩০) এবং অনুপ দাস (৪০) দ্বয়কে বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করলে আসামী মনসুর রহমান নিজের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এছাড়া তাদের দেয়া তথ্যমতে পরবর্তীতে পলাতক অপর আসামী মামুদ ইকবাল, পিতা- ছানু মিয়া, গ্রাম দত্তগ্রাম, নবিগঞ্জ, হবিগঞ্জকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে ৮ জুলাই আদালতে সোপর্দ করা হয়। উক্ত লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *