টি-টোয়েন্টিতে হারের বৃত্তে আটকে যাওয়া বাংলাদেশ দল দীর্ঘদিন পর জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পায়। তবে সেই জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারেনি টাইগাররা। প্রথম ম্যাচ হারের পর আজ মঙ্গলবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও হেরেছে ১০ রানের ব্যবধানে। এতে ১-২ ব্যবধানে সিরিজ হারল সফরকারীরা। এই হারের ফলে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল বাংলাদেশ।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

আগের দুই ম্যাচে সমান ১টি করে জয় পায় দুই দল। সে হিসেবে আজ শেষ ম্যাচটি হয়ে ওঠে অঘোষিত ফাইনাল। এ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে রায়ান বার্লের ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরিতে ৮ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১৫৬ রানের পুঁজি পায় স্বাগতিকরা। ১৫৭ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে জিম্বাবুয়ের বোলারদের কাছে ধরাশায়ী টাইগার ব্যাটসম্যানরা। শেষদিকে কিছুটা আশা জাগলেও তাদের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে।
১৫৭ রানের লক্ষ্য, টি-টোয়েন্টিতে এমন লক্ষ্যকে বড়জোর মাঝারি মাপের বলা চলে। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যেমন শুরুর দরকার ছিল বাংলাদেশের, তেমনটা এনে দিতে পারেননি ওপেনাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে লিটন দাস। ভিক্টর নিয়াউচিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ডানহাতি। ৬ বলে ১৩ রান করেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অভিষেক ক্যাপ পাওয়া পারভেজ হোসেন ইমন ২ রানের বেশি করতে পারেননি। টাইমিংয়ে গড়বড় করে নিয়াউচির বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
দলে সুযোগ পেয়েও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি এনামুল হক বিজয়ও। আরো একবার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ১৩ বলে ১৪ রান করে বোল্ড হন। এতে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ। সেই বিপদ আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি সফরকারী শিবির। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিছুটা আশা দেখালেও সেট হয়েও নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি তারা।
ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ে ২০ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে শান্ত। যেখানে কোনো বাউন্ডারির মার নেই তার। শান্তর এমন শম্ভুক গতির ইনিংস দলের বিপদ আরো বাড়িয়েছে।
দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ খানিক চেষ্টা করলেও সুবিধা করতে পারেননি। ইনিংসের ১৩তম ওভারে ইভানসের বলে আউট হন ২৭ বলে ২৭ করে। পরের বলে এসেই পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এক ম্যাচের জন্য অধিনায়কত্ব পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। শূন্য রানে ফেরেন তিনি।

শেষদিকে আফিফ হোসেন আর শেখ মেহেদী হাসান চেষ্টা চালালেও লাভ হয়নি তাতে। সপ্তম উইকেটে তাদের দুইজনের ২৪ বলে ৩৪ রানের জুটি পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু। মেহেদী ১৭ বলে ২২ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। আফিফ ২৭ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত থেকে হারের সাক্ষী হয়েছেন শুধু। কাজে আসেনি তার লড়াকু ইনিংস। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে। ১০ রানে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় জিম্বাবুয়ে।
এর আগে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু পায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ৩ ওভারে তোলে ২৯ রান। তবে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ঝড়ো শুরুর আভাস দেওয়া চাকাভাকে ফিরিয়ে সফরকারীদের ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। আফিফের দারুণ ক্যাচে ১০ বলে ১৭ রান করে ফেরেন ওপেনার চাকাভা।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জোড়া আঘাত শেখ মেহেদী হাসানের। ওয়েসলে মাধেভেরেকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠান মাত্র ৫ রানে। এর রেশ না কাটতেই শিকার নতুন ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা। আগের দুই ম্যাচেই ফিফটি করা রাজা এবার নিজের খেলা প্রথম বলেই শূন্য রানে ফেরান। মেহেদীর স্পিন ঘূর্ণিতে পাওয়ার-প্লে শেষে উড়ছিল বাংলাদেশ।

৬ ওভারে ৪৫ রান তুললেও ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া স্বাগতিকরা পরে খেই হারায় বাংলাদেশ দলের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। দলীয় নবম ওভারে উইলিয়ামসকে ফেরান মোসাদ্দেক। ব্যক্তিগত ২ রানে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন উইলিয়ামস। পরের ওভারেই সাফল্য আসে মাহমুদউল্লাহর হাত ধরে। প্রথমবার আক্রমণে এসে উইকেটের দেখা পান তিনি। ক্রেইগ আরভিনকে ফেরান স্টাম্পিংয়ে ফাদে ফেলে।
১৩তম ওভারের শেষ বলে মুস্তাফিজ ফেরান মিল্টন শুম্বাকে। আউটসাইড অফের বল খোঁচা দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। ১১ বলে ৪ রান করেন তিনি। ১৩ ওভারে ৬৭ রানে ৬ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়েকে সেখান থেকে টেনে তোলেন রায়ান বার্ল আর লুক জংওয়ে। ইনিংসের ১৫তম ওভারে ৫টি ছয় ও ১ চারের সাহায্যে নাসুমের ওভার থেকে বার্ল তুলে নেন ৩৪ রান। টি-টোয়েন্টি এটি বাংলাদেশি কোনো বোলারের সবচেয়ে খরুচে ওভার।

পরে মাত্র ২ চার ৬ ছয়ের মাতে মাত্র ২৪ বলে ফিফটি তুলে নেন বার্ল। ২৮ বলে ৫৪ রানে থামেন তিনি। তার আগে জংওয়ে ২০ বলে ৩৫ রানে ফিরিয়ে ৩১ বলে ৭৯ রানের সপ্তম পার্টনারশিপ ভাঙেন হাসান মাহমুদ। জংওয়ের ব্যাট থেকে আসে ২০ বলে ৩৫ রান। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় জিম্বাবুয়ে। বোলারদের নৈপুণ্যে সে পুঁজিই যথেষ্ট হয়ে যায় দলটির জন্য। আর বাংলাদেশের সঙ্গী হয় একরাশ লজ্জা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *