দেশের পুঁজিবাজারসহ বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের শুভেচ্ছাদূত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত নয় বলে প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বেশ কিছু কোম্পানির কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সাকিব আল হাসান ও তার প্রতিষ্ঠানের নাম আসে। তবে শেয়ার কারসাজিতে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় সাকিব ও তার প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তবে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারীসহ প্রতিষ্ঠানকে মোটা অংকের জরিমানা করা হয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

কমিশনের মতে, তদন্ত কার্যক্রমে সাকিবের নাম উঠে এসেছে। কিন্তু কারসাজিকারীর সঙ্গে তার যোগসাজশ পাওয়া যায়নি। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার সময় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য অনেককেই সন্দেহের তালিকায় নেওয়া হয়। কিন্তু তাদের সবাই যে কারসাজিতে জড়িত থাকবেন, এমনটি নয়। একাধিক যাচাই-বাছাই করে, প্রকৃতপক্ষে যারা শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত; তাদের চিহ্নিত করে জরিমানা করা হয়েছে। আর অন্যদের এই তদন্ত কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। শেয়ার কারসাজির সাথে তার কোনও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। এজন্য তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সাকিব আল হাসান শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে কারসাজিতেও জড়িয়ে পড়েছেন- এমন খবরে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমালোচকরা শুভেচ্ছাদূতের এমন কর্মকাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ণ হচ্ছে বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশ করেছেন। অনেকেই করছেন বাজে মন্তব্য। মূলত বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাকিবকে নিয়ে ‘মনগড়া ও অসত্য খবর’ প্রকাশিত হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করে বিএসইসি।
এদিকে, কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার খবরে সাকিবসহ তার পরিবার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) বিব্রত। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের পরিকল্পনার ব্যাপারে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন নাজমুল হাসান পাপন। এসময় শেয়ার কারসাজিতে সাকিবের জড়িত থাকা নিয়ে প্রশ্ন শুনে ‘হতভম্ব’ হন বিসিবি বস। তিনি বলেন, ‘বলেন কী! আমি তো এ ব্যাপারে জানি না। ওটা যেহেতু ক্রিকেটের সঙ্গে না, এখন আমি কী করব? এ বিষয়ে আমি জানি না। যদি ক্রিকেটের সঙ্গে হতো তাহলে কথা ছিল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে তো অনেকেরই নাম থাকে কিন্তু সবাই কি অভিযুক্ত? তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিব আল হাসানের নামে কোনও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হয়নি। তাই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি, তাকে এ বিষয়ে কোনও সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়নি।’
তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাকিবের শেয়ার কারসাজি নিয়ে যেসব খবর প্রকাশ করা হচ্ছে, তা সঠিক নয় বলেও নিশ্চিত করেন মোহাম্মাদ রেজাউল করিম।
তথ্যমতে, দেশের পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রাণিত করতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর (শুভেচ্ছাদূত) হিসেবে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএসইসি। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশন (আইওএসসিও) দেশের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, খেলোয়াড় বা নামীদামী ব্যক্তিকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সাকিব আল হাসানকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নেয় কমিশন। শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী হয়ে তিনিও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। সম্প্রতি তিনি মোনার্ক হোল্ডিং নামে একটি ব্রোকারেজ হাউজের (শেয়ার কেনাবেচা হাউজ) লাইসেন্স কিনেছেন। এভাবেই সাকিব শেয়ার ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন।

বিএসইসির তথ্যমতে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও তার সহযোগীরা গত বছরের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কারসাজির লক্ষে ধারাবাহিক লেনদেনের মাধ্যমে ৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায়। এক পর্যায়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা চরম লোকসানের শিকার হন। কোম্পানি হলো- ওয়ান ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, বিডিকম অনলাইন ও ফরচুন সুজ। এই ৭ কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি করে যে চক্রটি ১৩৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে; সার্বিক দিক বিবেচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও সহযোগীদের ১০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি।

প্রসঙ্গত, গত মাসে জুয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি করে সাকিব আল হাসান বিসিবির তিরস্কারের শিকার হয়েছিলেন। চুক্তি বাতিল না করলে জাতীয় দল থেকে তিনি বাদ পড়বেন- এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে বিসিবির অনড় অবস্থায় শেষ পর্যন্ত তিনি সেই চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। বর্তমানে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অবস্থান করছেন সাকিব আল হাসান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *