আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: সাধারণভাবে ‘ব্লাড ক্যানসার’ নামে পরিচিত রোগ লিউকেমিয়ার ওষুধ বিশ্বজুড়ে উৎপাদনের জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি করেছে সুইস-আমেরিকান বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভারটিস। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের দেওয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মেডিসিন পেটেন্ট বিভাগের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে নোভারটিস কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বের মধ্যম-আয়ের সাত দেশ— মিসর, গুয়েতেমালা, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও তিউনিসিয়ার কিছু বাছাই করা কোম্পানিকে বিশেষ লাইসেন্স দেওয়া হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলো লিউকেমিয়ার একমাত্র মুখে খাওয়ার ওষুধ নিলোটিনিবের জেনেরিক (ভিন্ন নামের একই ওষুধ) উৎপাদন করতে পারবে।
মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদেহে রক্ত তৈরি হয় অস্থিমজ্জা থেকে। এই রক্তের প্রধান উপাদান দু’টি— রক্তরস ও রক্তকণিকা। মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের রক্তে তিন ধরনের রক্তকণিকা থাকে— লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা বা প্ল্যাটিলেট।
লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের দেহে শ্বেত রক্তকণিকা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায় এবং ক্রমবর্ধমান এসব শ্বেত রক্তকণিকা একসময় লোহিত রক্ত কণিকাকে ভক্ষণ করতে থাকে। এই স্তরকে বলা হয় ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ।
দ্বিতীয় ধাপে অস্থিমজ্জায় হানা দেয় শ্বেত রক্তকণিকা এবং তা ক্ষয় করতে থাকে। ফলে নতুন রক্ত তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং অসহ্য যন্ত্রণায় একসময় রোগীর মৃত্যু হয়। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৩ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর লিউকেমিয়ায় মারা যায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
অন্যান্য ক্যানসারের মতো লিউকেমিয়ার চিকিৎসাও জটিল ও ব্যয়বহুল। দীর্ঘদিন পর্যন্ত লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসারের মুখে খাওয়ার কোনও ওষুধও ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুডস অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন সাপেক্ষে ২০০৭ সালে প্রথম লিউকেমিয়ার মুখে খাওয়ার ওষুধ নিলোটিনিব বাজারে আনে নোভারটিস। এখন পর্যন্ত এটিই লিউকেমিয়া রোগের একমাত্র মুখে খাওয়ার ওষুধ।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাবিষয়ক অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপরিহার্য ওষুধের তালিকাতেও নাম আছে নিলোটিনিবের। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মেডিসিন পেটেন্ট বিভাগের প্রধান চার্লস গোর বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন ওষুধ খুবই জরুরি উপকরণ। আমরা মনে করছি, এই চুক্তির মাধ্যমে মানব সভ্যতা সেই লড়াইয়ে আরও একধাপ এগোলো।’
নোভারটিস কোম্পানির গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের প্রেসিডেন্ট লুৎজ হেজেমান বলেছেন, ‘জাতিসংঘের সঙ্গে এমন একটি কল্যাণমূলক পদক্ষেপের অংশ হতে পারায় আমার গর্বিত।’
জাতিসংঘ-নোভারটিসের চুক্তির তালিকায় থাকা সাত দেশের মধ্যে অন্যতম পাকিস্তান এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের হামিদ লতিফ হাসপাতালের ক্যানসারবিদ জেবা আজিজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। কারণ (এই চুক্তির ফলে) বিশ্বজুড়ে দরিদ্র ও মধ্যম-আয়ের অনেক মানুষ এখন ক্যানসারের চিকিৎসার আওতায় আসতে পারবেন।’
-সূত্র: এএফপি

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *