সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যটিট্রিক গোল করার পর উল্লসিত গন্সালো রামোস। ছবি : ইন্টারনেট

কাতার বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন রামোস

স্পোর্টস ডেস্ক :: বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোতে ফার্নান্দো সান্তোসের দল সবার মন ভরাতে না পারলেও দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে এসে ঠিকই জ্বলে উঠলো রোনালদোর পর্তুগাল। সুইজারল্যান্ডকে কোনো রকম সুযোগ না দিয়ে ৬-১ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে দিল ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নরা৷
এই ম্যাচে শুরুর একাদশে রোনালদোকে দলে রাখেননি কোচ সান্তোস। তার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান গন্সালো রামোস। এটা নিয়েও কম আলোচনা হচ্ছিল না ম্যাচ শুরুর আগে। কিন্তু সব আলোচনায় ঘি ঢেলে দিলেন এই বেনফিকা স্ট্রাইকার।
কেন তাকে ভবিষ্যত তারকা স্ট্রাইকার ভাবা হচ্ছে সেটা প্রমাণের জন্যেই বিশ্বকাপের নক আউট রাউন্ডের মঞ্চকে বেছে নিলেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে তার অনবদ্য হ্যাটট্রিক এবং পেপে, লেয়ো ও গুয়েরেরোর গোলে সুইজারল্যান্ডকে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারালো পর্তুগাল।
প্রথমার্ধেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় পর্তুগাল। ম্যাচের ১৭ মিনিটেই প্রথম গোল পায় পর্তুগাল। বাম পাশ থেকে হোয়াও ফেলিক্সের ডিফেন্স চেরা পাসে। বা পায়ের বুলেট গতির শটে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে কোনাকুনি শটে দারুণ গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তিনি। চলতি মৌসুমে বেনফিকার হয়ে ১৪ গোল করার পাশাপাশি পর্তুগালের জার্সি গায়ে করেছেন ২ গোল। তার এমন পারফরম্যান্সই তাকে একাদশে নামাতে বাধ্য করে সান্তোসকে।
গোল খেয়ে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করে সুইসরা। কিন্তু পর্তুগিজদের দারুণ রক্ষণভাগের কারণে পেরে ওঠেনি। উলটো ৩৩ মিনিটে আবার গোল খেয়ে বসে সুইজারল্যান্ড। এবার কর্নার থেকে দারুণ হেডে গোল করেন ৩৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডার পেপে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে পেপেই সবচেয়ে বয়স্ক ফুটবলার যিনি নকআউট রাউন্ডে গোল করলেন।
বিরতিতে যাওয়ার আগে সুইজারল্যান্ডের শাকিরি ও জাকা কয়েকটা প্রচেষ্টা চালালেও তা পর্তুগিজ রক্ষণভাগে গিয়ে শেষ হয়ে যায়। ফল ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় পর্তুগাল।
বিরতি থেকে ফিরে আরো যেন ক্ষুরধার পর্তগাল। ৫২ মিনিটে আবারো গোল দেন রামোস। ডান পাশ থেকে দিয়েগো দালোতের বাড়ানো ক্রসে দারুণ ফিনিশিংয়ের মাধ্যমে পর্তুগালকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন৷
এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতে আবারো গোল দেয় পর্তুগাল। এবার স্কোরশিটে নাম লেখান রাফায়েল গুয়েরেরো। রামোসের বাড়ানো বল থেকে দারুণ শটে গোল করেন তিনি।
৪ গোলে পিছিয়ে থেকে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় সুইজারল্যান্ড। ৫৯ মিনিটে ম্যানুয়েল আকাঞ্জি সুইসদের হয়ে একটি গোল শোধ দেন। তবে সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
৬৭ মিনিটে পর্তুগালের হয়ে নিজের তৃতীয় ও দলের ৫ম গোলটি করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন গন্সালো রামোস। পেলের পর তিনিই সবচেয়ে কমবয়সী ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের নক আউট রাউন্ডে হ্যাটট্রিক করলেন। তার হাত ধরেই এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক দেখলো সবাই।
৭৩ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রোনালদো। ৮৫ মিনিটে একটি গোলও করেন তিনি। তবে অফসাইডের কারণে রেফারি গোলটি বাতিল করেন। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে এসি মিলান তারকা রাফায়েল লেয়ো আরো একটি গোল করলে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় পর্তুগাল। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ মরক্কো।
প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন রামোস : বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব শেষ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডও শেষের পথে। কোন হ্যাটট্রিকের দেখা পাচ্ছিল না এবারের বিশ্বকাপ। অবশেষে দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষ ম্যাচে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিকের দেখা পেল সবাই গন্সালো রামোসের কল্যাণে।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে রোনালদোর পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পেয়েই কীভাবে জ্বলে উঠতে হয় তা দেখালেন রামোস। এই বেনফিকা ফুটবলারকে ইতোমধ্যেই বড় ক্লাবগুলো নজরে রেখেছে। প্রথমার্ধের ১৭ মিনিট ও দ্বিতীয়ার্ধের ৫১ ও ৬৭ মিনিটে গোল করে জাতীয় দলের হয়ে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি।
এই ম্যাচের আগে ২১ বছর বয়সী রামোসের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ৩৪ মিনিটের। চলতি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচে রোনালদোর বদলি হয়ে নেমেছিলেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম তিনি আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচের শুরুর একাদশের হয়ে মাঠে নামেন।
রোনালদোর জায়গায় রামোসকে একাদশে স্থান দেওয়ায় পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দেজ সান্তোসকে বিস্তর সমালোচনা শোনতে হয়েছে । তবে রামোস প্রথম একাদশে মাঠে নেমেই কোচের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে প্রমাণ করেছেন।
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে হ্যাটট্রিক পরেই অবশ্য রামোসকে উঠিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে মাঠে নামিয়েছেন কোচ সান্তোস।
বিশ্বকাপ নকআউট পর্বে রামোসের এই হ্যাটট্রিক রেকর্ড বইয়েও স্থান পেয়েছে। এটি চলতি বিশ্বকাপে প্রথম কোনো হ্যাটট্রিক। এছাড়া মাত্র ২১ বছর ১৬৯ দিন বয়সে রামোসের এ হ্যাটট্রিক ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে ফ্লোরিয়ান অ্যালবার্টের করা হ্যাটট্রিকের পর সর্বকনিষ্ঠ কারো কীর্তি। হাঙ্গেরির ফ্লোরিয়ান অ্যালবার্ট বুলগেরিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ২০ বছর ২৬১ দিন বয়সে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *