মনজু বিজয় চৌধুরী; পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পাড়ে শুরু হয়েছে। প্রচন্ড শীতে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেও মেলা জুড়ে ছিল ক্রেতা বিক্রেতা আর কৌতুহলী মানুষের ঢল। প্রতি বছরের মৌলভীবাজার জেলার শেরপুরে জমে উঠছে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। গত দু’বছর করোনার কারণে না হলেও এবার উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হচ্ছে মাছের মেলা। মেলাকে নিয়ে এ অঞ্চলের মানুুষ অধীর আগ্রহে থাকেন কখন বছর ঘুরে শুরু হবে মাছের মেলা। মেলাটি শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে, শেষ হবে রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে।
১৯৭২ সালে উপজেলার মনোমুখে এ মেলা নিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই জেলা সদরের ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুরের অদূরে ব্রাহ্মণ গ্রামের কুশিয়ারা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেলা। মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের সীমানা ঘেষে জেলার শেরপুর এলাকায় বসে প্রতি বছর মাছের মেলা।
পৌষ সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে মাছের মেলার প্রচলন শুরু করেন জমিদার মথুর বাবু। এ থেকেই ঐ এলাকায় প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে আয়োজন করা হয় ‘মাছের মেলা’ নামের এই মেলা।
করোনাভাইরাস ও ওমিক্রন সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় গেল দুই বছর এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াতে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। মেলায় এক সাথে বড় আকারের এত মাছ দেখে নতুন আগুন্তুক অনেকেই আশ্চর্য হন। তাই মাছ কিনতে ও দেখতে উৎসুক মানুষের ভীড় ও বাড়তি কৌতুহল নিবারণে তারা পুরো মাছের মেলা ঘুরে দেখেন। ব্যবসায়ীরা মেলায় পার্শবর্তী কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওর ও সুনামগঞ্জের টাঙুগুয়ার হাওর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, বাঘাইড় ও আইড় মাছ সহ বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে আসেন মোলায়।
যদিও এটি মাছের মেলা নামে পরিচিত তথাপি মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্থালী সামগ্রী, খেলনা ইমিটেশন,কাপড়, জুতা, সহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকান স্থান পায়। বর্তমানে এই মাছের মেলা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
মাছ বিক্রেতারা জানান ২ মণ ওজনের বাগাই মাছ নিয়ে এসেছেন সুনামগঞ্জের এক বিক্রেতা। তিনি মাছটি সুরমা নদী থেকে ধরেছেন। মেলায় মাছটির দাম হাঁকাছেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত তিনি ২ লক্ষ টাকা হলে মাছটি বিক্রি করবেনহাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা মাছ সাধারণত নিয়ে আসেন এই মেলায়। মেলা উপলক্ষে মাছের চাহিদা কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় তারা বেশি মূল্য মাছ সংগ্রহ করতে হয় তাদের। ঐতিহ্য ধরে রাখতে বছর জুড়ে নানা কষ্ঠেতারা মাছ সংগ্রহে রাখেন। তারা মেলায় স্থানীয় হাওর ও নদীর অনেক বড় বড় জীবিত মাছ ও ফরমালিন মুক্ত নিয়ে আসেন। পরিপক্ষ এ মাছ গুলো খেতেও সুস্বাদু। তবে এ বছর মেলা উপলক্ষে মাছের সংগ্রহ বেশি থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটা কম।
ক্রেতা বলেন প্রতি বছর মাছের মেলার অপেক্ষায় থাকেন তিনি নদী ও হাওর থেকে আসা টাটকা মাছ ক্রয় করতে। মাছ কিনে তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে আত্মীয়স্বজনদের আমন্ত্রণ করে একসাথে খাবারের আয়োজন করেন মেলা থেকে কিনে আনা মাছ। মেলা উপলক্ষে অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির ফরমালিন মুক্ত টাটকা মাছ কিনতে আসেন।তাছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আতœীয় স্বজনরাও আসেন বাড়িতে নানা জাতের মাছের স্বাদ নিতে। মেলায় এক কেজি মাছ থেকে শুরু করে ২০০ কেজি ওজনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। যার বাজার মূল্য লক্ষাধিক টাকা।
৫ বছর ধরে জুয়া সহ যাত্রা ও পুতুল নাচের নামে অশ্লিলতা বন্ধ হয়ে শুধু মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিয্য ফিরে পেয়েছে। এছাড়াও প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব সরকারকে তারা দিলেও মেলার জন্য এখনও স্থায়ী কোন স্থান গড়ে উঠেনি। তিনি সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে ঐতিয্যবাহী এ মাছের মেলা ঠিকিয়ে রাখতে স্থায়ী ভাবে একটি স্থান নির্দ্দরণের দাবী করেন।

