একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী গকুলানন্দ চক্রবর্তীকে যখন হত্যা করে মেয়ে রীনা চক্রবর্তী তখন মায়ের গর্ভে। বাবার মৃত্যুর কয়েক মাস পর জন্ম হয় তার। এতোদিন কেবল গল্প শুনেছেন বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়েছেন। কিন্তু কোথাও বাবার কোন স্মৃতিচিহ্ন ছিলো না।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

অবশেষে ৫২ বছর পর শনিবার বাবার স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পেলেন রীনা। কখনো না দেখে বাবার স্পর্শ পেলেন যেনো।

সিলেটের সালুটিকর বধ্যভূমিতে শহিদ গকুলানন্দ চক্রবর্তীর স্মৃতিফলকে হাত বুলাতে বুলাতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রীনা চক্রবর্তী বলেন, বাবাকে আমি কখনো দেখিনি। কোথাও তার স্মৃতিচিহ্নও ছিলো না। ৫২ বছর পর আজকে এই বধ্যভূমতে তার একটি স্মৃতিফলক লাগানো হলো। এই প্রথম যেনো আমি বাবার স্পর্শ পেলাম।

রীনা চক্রবর্তীর মতো ৬৬ টি পরিবার শনিবার প্রথমবারের মতো দেশের জন্য আত্মোত্যাগকারী তাদের শহিদ স্বজনদের স্মৃতিচিহ্নের সন্ধান পান এই বধ্যভূমিতে।

একাত্তরে সালুটিকর এলাকার সিলেট ক্যাডটে কলেজে ক্যাম্প গড়েছিলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাসহ বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা ও নির্যাতন করা হতো এখানে। হত্যার পর ক্যাডটে কলেজের পেছনেই গণকবর দেওয়া হয় তাদের। এখানে অন্তত দুশজন বাঙালিকে গণকবর দেওয়া হয় বলে ধারণা করা হয়।

সালুটিকরের এই গণকবরটি সবার কাছেই বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত থাকলেও এতোদিন এটি পড়েছিলো পরিত্যক্ত অবস্থায়। ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিলো এই টিলা ভূমি। ছিলো না কোন স্মৃতিচিহ্নও। সেনানিবাসের সংরক্ষিত এলাকায় এই বধ্যভূমির অবস্থান হওয়ায় সাধারণের প্রবেশাধিকারও ছিলো না।

অবশেষে স্বাধীনতার ৫২ বছর পর দুই মুক্তিযোদ্ধার উদ্যোগে এই বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাদের উদ্যোগেই এখানে নির্মাণ করা হয়েছে নান্দনিক শহিদ স্মৃতি উদ্যান। শনিবার এই উদ্যানের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ স্বজনরা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব) মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বীর প্রতীক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদের উদ্যোগে নির্মিত এই শহিদ স্মৃতি উদ্যানে এ পর্যন্ত এখানে গণকবর দেওয়া ৬৬ জন শহীদকে চিহ্নিত করে তাদের নামে আলাদা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। গণকবর দেওয়া বাবী শহিদদেরও চিহ্নিত করে তাদেরও স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এই দুজন ছাড়া স্বাধীনতার শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ বাস্তবায়ন কমিটিতে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অপূর্ব শর্মা।

শনিবার দুপুরে এই শহিদ স্মৃতি উদ্যানের উদ্বোধনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদদের স্বজনরা। ৫২ বছর পর দেশের জন্য জীবন দেওয়া নিজের স্বজনের স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পেয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তারা। এসময় যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ করেন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বজনরা।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *