ডায়াল সিলেট ডেস্ক ॥ এখন তারা এক ধরনের বেকার। কেউ আর তাদের কাছে আসে না। মনের না বলা কথা, সুখ, দুঃখ, প্রেম, ভালোবাসা মাখানো চিঠিগুলো আর তারা পায় না। ফলে দিনের পর দিন রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে কর্মহীন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ডাকবাক্সগুলোর শরীরে মরচে ধরেছে, রং গিয়েছে চটে। এখন কেবল মৃত্যুর প্রতীক্ষা যেন। অথচ এই ডাকবাক্স ড আ ডাকপিয়ন নিয়ে বাঙালির আবেগের কোনো শেষ ছিল না। বেশি দিনের কথা তো নয়। ম७० বছর আগেও চিঠিই ছিল দূরের স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। প্রিয়জনের কাছে চিঠি লিখে এবং নামে নাম-ঠিকানা লিখে ডাকবাক্সো ফেলে দিলেই হলো। এরপর অপেক্ষা করে প্রিয়জনের উত্তরের। এদিকে ডাকবাক্স খুলে প্রতিদিন সেখান থেকে চিঠি নিয়ে ডাকারে সিল দিয়ে সেগুলো সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করতেন ডাকপিয়ন। সে এক অন্য রকম সময়। প্রিয়জনের আবেগ, স্পর্শ মা চিঠিগুলো ছিল একাধারে তথ্য, ভালোবাসা আর সুখানুভূতির আধার। সে চিঠি একবার, দুবার… কতবার যে পড়া হতো। তবে এখন এই ডিজিটাল যুগে সেই চিঠিও নেই, আর ডাকপিয়ন, ডাকঘর, ডাকবাক্সের কাজও ফুরিয়েছে। মুঠোফোনের মেসেজ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভিডিও কলে দুরের মানুষ এখন কাছে-পিঠেই থাকে।দ্রুততম যোগাযোগমাধ্যম এখন হাতের মুঠোয়া থাকায় প্রত্যন্ত গ্রামের বন্ধুও চিঠি লেখাকে মনে করেন। এভাবে কালের পাতে হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জনের কাছে হাতে লেখা চিঠি আর ডাকবাক্সের কদর। এখন ডাকবাক্সে সরকারি চিঠিপত্র ছাড়া আর কোনো চিঠিই। পানামা না।মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পোষ্ট অফিসের সামনে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি ডাকবাক্স।পাকা ঘরে লাল রোডটি টিকে থাকলেও ডাকবাক্সের রং বিলীন হয়ে গেছে বেশ আগেই। সপ্তাহে দু-একবার খোলা হয় এই অবদান। পোস্টমাস্টার ও পিয়ন নিয়ম করেই ডাকারে আসেন, তবে কাজ না থাকা কাটাতে হয় অলস সময়। অথচ আগে মানুষের আনাগোনা ও ডাকপিয়নের ঘটঘট শব্দ চলত সারা দিন। লাইন ধরে কেউবা টাকা জমা দিতেন, কেউবা আবার টাকা নিতেন।বাংলাদেশে বর্তমানে ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাবার দেছে। অকার গুলো টিকে আছে মানি ট্রান্সফার সঞ্চয় গ্রহণসহ নানা বিকল্প সেবার মাধ্যমে। অনত্ন, অবহেলা আর অব্যবহৃত হতো শতাধিক ডাকঘরই অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। মাসের পর মাসে খোলা হয়নি এমন ডাকবাক্সের সংখ্যাও কম নয়।কমলগঞ্জ পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাষ্টা নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, বর্তমানে পোষ্ট অফিসে পার্শ্বেল, বিমা, পরীক্ষার খাতা, মোবাইল মানি অর্ডারের মতো কাজগুলো হচ্ছে। আগের দিনের মতো এখন আর ব্যাপকভাবে চিঠিপত্র লেনদেন হয় না। তবে এখনো কিছু লোক আদান-প্রদান করে থাকেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *