ডায়াল সিলেট ডেস্ক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চলছে তীব্র গরম। টানা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা প্রচণ্ড গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তীব্র গরমে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। শহর-শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টাজুড়ে চলছে লোডশেডিং। আগে গরম থেকে স্বস্তি পেতে হাতপাখা ভরসা ছিল সবার। তবে বর্তমানে প্রতি বাসা-বাড়িতে রয়েছে বৈদ্যুতিক পাখা। কেউ কেউ ব্যবহার করছেন এসিও। সম্প্রতি শ্রীমঙ্গলে তীব্র গরম ও অতিরিক্ত লোডশেডিং বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কদর বেড়েছে হাতপাখার। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঘুমও হারাম হয়ে গেছে পাখা তৈরির কারিগরদের। সরেজমিনে দেখা যায় কারিগররা এখন দিনরাত সমান হাত পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত। লোডশেডিং আর প্রচণ্ড গরমের কারণে শহর-গ্রাম সর্বত্রই হাতপাখার কদর বেড়েছে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং বেশি হওয়ায় গ্রাম-গঞ্জে হাতপাখার কদর সবচেয়ে বেশি। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে শ্রীমঙ্গল শহরের সোনার বাংলা রোড, নতুন বাজার, পোস্ট অফিস রোড, হবিগঞ্জ রোডসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে তালপাতা, সুতার তৈরি, বাঁশের ডান্টির তৈরি হাতপাখাসহ রকমারি ডিজাইনের হাতপাখা বিক্রির হিড়িক পড়েছে। অনেকে পেশা হিসেবে দোকান কিংবা ফেরি করেও হাতপাখা বিক্রিতে নেমেছেন। শুক্রবার (১২ মে) সকালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের জালালিয়া সড়কে দেখা যায় এক তরুণ বাইসাইকেলে ফেরি করে হাত পাখা বিক্রি করছেন। তার সাথে আলাপ করে জানা যায়, তিনি সিন্দুরখান ইউনিয়নের জানাউড়া এলাকা থেকে এসেছেন। তিনি নিজ বাড়িতে হাত পাখা তৈরি করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। প্রতি পিস খুচরা ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন বলে জানান পাখা বিক্রেতা জুনেদ মিয়া। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়ন থেকে শ্রীমঙ্গল শহরে পাইকারি দামে হাতপাখা কিনতে আসা ব্যবসায়ী ছমির হোসেন বলেন, এক দিকে প্রচণ্ড গরম, সেইসঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেশি থাকায় গ্রাম-গঞ্জে এখন পাখার কদর তুঙ্গে। তাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পাখা। শহরের পাইকারি পাখা বিক্রেতা কবির মিয়া জানান, এ বছর গরমের শুরুতেও হাতপাখার চাহিদা এতো বেশি ছিল না। হঠাৎ করে গরম বেশি পড়ার কারণে এবং লোডশেডিংয়ের কারণে পাখার চাহিদা দিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। গরমের শুরুতে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ পিস পাখা বিক্রি হতো। আর এখন গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতপাখার চাহিদা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। এখন প্রতিদিন একেকটি দোকানে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৬০০ পিস পাখা বিক্রি হচ্ছে। এদিকে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারিতে পাখার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেখানে বাঁশের হাতল দিয়ে তৈরি প্রতি পিস হাতপাখার দাম পড়তো ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এখন সেই হাতপাখা পাইকারি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। খুচরা প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকা পর্যন্ত। বাজার ঘুরে দেখা যায় উপজেলায় বর্তমানে বাঁশের হাতল বা বাঁশের ডান্টির তৈরি হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা আর তালের হাতল বা তালের ডান্টির তৈরি হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১৪০ থেকে ১৮০ টাকায়। নুরুল ইসলাম নামের আরেক পাইকারি পাখা বিক্রেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোডের (গাংপার) এলাকায় ২৫ বছর ধরে পাখা তৈরি করে পাইকারি বিক্রি করে আসছি । ময়মংসিংহের গফরগাঁও এলাকায় আমার মূল বাড়ি। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। এবার প্রচণ্ড গরমে হাতপাখার কদর বৃদ্ধি পেয়েছে। কারিগদের মজুরি, বাশ, তাল গাছসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতাদের কিছুটা বেশি দামে হাতপাখা কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন দ্রব্যমূল্যের চড়া দামের বাজারো পাখা তৈরির আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবু বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা হিসেবে হাতপাখা তৈরির ব্যবসাকে কোনোরকম ধরে রেখেছেন।

