ডায়াল সিলেট ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ সরকার ও চীন সরকারের অর্থায়নে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রকল্পের মাধ্যমে এটি বাস্তাবায়ন হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মৌলভীবাজারে বিদ্যুতের গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর গত প্রায় তিন বছরে মাটি ভরাট করার কাজই শেষ হয়নি। মাটি ভরাট সম্পন্ন হলে অবকাঠামো ও কন্ট্রোল রুম নির্মাণ এবং ট্রান্সফরমার বসানো হবে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। স¤প্রতি সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণ প্রান্তের অধিকাংশ জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে উত্তর প্রান্তের জমি ভরাট অনেকটা বাকি। প্রকল্প স্থানে কোনো শ্রমিক পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক দিন শ্রমিকরা প্রকল্প স্থানে আসছেন না। ফলে মাটি বা বালু ভরাটের কাজ বন্ধ রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় অর্ধেকের মতো মাটি ভরাট হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহর ও শরহতলিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে, লোডশেডিং কমাতে এবং শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনে বিদ্যুতের লাইন দিতে ‘মৌলভীবাজার ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২০১৯ সালে মৌলভীবাজার-রাজনগর আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার রায়শ্রী গ্রামে ৫ দশমিক ০৫৩৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
২০২১ সালে শুরু হয় প্রকল্প মাটি ভরাটের কাজ। তিন বছরে প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে অর্ধেকের মতো। কিছুদিন কাজ বন্ধ রয়েছে। মাটি ভরাট কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হবে অবকাঠামো নির্মাণ ও কন্ট্রোল রুম নির্মাণকাজ। এসব কাজের শেষে বসানো হবে ট্রান্সফরমার। এরপর এ গ্রিড উপকেন্দ্র বুঝিয়ে দেওয়া হবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডকে। সে সময় থেকে গ্রাহকপর্যায়ে এখান থেকে সরবরাহ করা হবে বিদ্যুৎ। এখন যে গতিতে কাজ চলছে তাতে কোনোভাবেই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলি এলাকায় বিউবোর ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এ এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪ মেগাওয়াট। ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইন এবং ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল লাইনের মাধ্যমে এখানে বিদ্যুৎ আসে। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলে বা জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে গাছ পড়ে এ লাইন অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে প্রায়ই মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে গ্রাহকপর্যায়ে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়।
বিউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুল বাহার বলেন, ‘মৌলভীবাজার ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। ২০২১ সালে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হলেও এখনও তা সম্পন্ন করা যায়নি। মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এখানে অবকাঠামো নির্মাণ, কন্ট্রোল রুম নির্মাণ ও ট্রান্সফরমার বসানোর কাজ হবে। এখন দ্রুতগতিতে কাজ হলেও এসব কাজ করতে আড়াই থেকে তিন বছর সময় লেগে যাবে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার দিন গুনছি। যত দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ হবে তত দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন গ্রাহকসেবা দিতে পারব। এ ছাড়া এখান থেকেই জেলার অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প ‘শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন’-এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। গ্রিড প্রকল্পের কাজ যদি পেছায় তবে এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহও পেছাবে।
প্রকল্প পরিচালক মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের সময় বর্ধিতকরণের কোনো আবেদন করেনি। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।’

