সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
ডায়াল সিলেট রিপোর্ট :: দল আর নির্বাচন- এই দু’টির মধ্যেই একটিকে বেছে নিতে হবে সিলেট সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে হলে দল ছাড়তে বিএনপির কেন্দ্রিয় কমিটির এই সদস্যকে। অথবা দলে অবস্থান টিকিয়ে রেখে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার পর আজ শনিবার এ ব্যাপারে নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন আরিফুল হক চৌধুরী।
আজ শনিবার দুপুরে নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ ডেকেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। এই সমাবেশ থেকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সিলেটে নির্বাচনে মেয়র পদে এ পর্যন্ত ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। আচরণবিধি ভেঙে তাদের বেশিরভাগই প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন। তবে এদের সবাইকে ছাপিয়ে নগরবাসীর সব কৌতূহল আরিফুল হক চৌধুরীকে ঘিরেই। আরিফ নির্বাচন করবেন কী-না এ নিয়েই আগ্রহ সবার। আরিফের আজকের সমাবেশের দিকে তাই তাকিয়ে সকলে।
তবে আরিফের সমাবেশের দু’দিনের আগে তার উপর চাপ আরো বড়িয়ে দিয়েছেন নিজ দলীয় কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কয়েস লোদী। একই সঙ্গে এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার জন্য দলের সব নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তবে নিজের উপর কোনো চাপ নেই জানিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি বিএনপি করি। আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে- বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। এবার যদি আমাকে নির্বাচন করতে হয় তবে দল ছাড়তে হবে। দলের আদর্শ থেকে সরে আসতে হবে। আর দল করতে হলে নির্বাচন ত্যাগ করতে হবে। আমি কী করবো সেটি শনিবার (আজ) জানাবো।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে শুরু থেকেই গুঞ্জন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আরিফুল হক চৌধুরীর বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে এই গুঞ্জন ও নগরবাসীর কৌতূহল আরো বাড়িয়েছে।
সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগের দিন, ২ এপ্রিল হঠাৎ লন্ডন সফরে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়াপার্সন তারেক রহমানের সাথে দেখা করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষেই আরিফ ঘোষণা দেন- এবার প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। আরিফকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ওঠে সে সময়।
তবে দেশে ফিরে নির্বাচন নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি আরিফ। এরমধ্যে ১ মে শ্রমিক দিবসের এক সমাবেশে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মেয়র আরিফ বলেন- সারাদেশে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও সিলেটের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সিলেটে আমরা নির্বাচনে যাবো। ২০ মে জনসভা করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো।
আরিফের এই বক্তব্যে ফের শুরু হয় তোলপাড়। বিশেষত বিএনপির মধ্যে অস্বস্থি দেখা দেয়। আরিফকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানামুখী তৎপরতাও শুরু করেন বিএনপি নেতারা।
গত ১০ মে সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃবৃন্দকে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেন। তারেক রহমানের এ নির্দেশনায় আরেক দফা ‘বাধার মুখে’ পড়তে হলো আরিফুল হক চৌধুরীকে। সেই বাধায় আারিফ নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়বেন না-কি বাধা ডিঙিয়ে ভোটে লড়বেন- তা জানা যাবে আজ।
চার হিসেব মেলাচ্ছেন আরিফ : আরিফ ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, দলের আপত্ত্বি সত্ত্বেও নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। তবে তার আগে চারটি হিসেব মেলাচ্ছেন তিনি। প্রথমত: দলের বিরোধিতা করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে বিএনপির রাজনীতিতে পুনরায় ফিরতে পারবেন কি-না। দ্বিতীয়ত: প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে কি না। তৃতীয়ত: বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আরিফ বলয়ের দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনে তারা এজেন্টের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন না। এতে ৪২টি ওয়ার্ডের মোট ১৯০টি কেন্দ্রে বিশ্বস্ত এজেন্ট পাওয়া যাবে কি-না। চতুর্থত: ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট হবে কি-না।
আরিফ ঘনিষ্ঠ বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এই চার প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর পেলে প্রার্থী হতে পারেন আরিফ।
তাদের দাবি, দলের চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সাথে ভালো সম্পর্ক নেই আরিফুল হক চৌধুরীর। তাই দলে ভালো পদ পাওয়ার সম্ভাবনা কম তার। অপরদিকে, সিলেট নগরে আরিফের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে দলটিতে ক্ষোভ রয়েছে। নিজের জনপ্রিয়তা আর আওয়ামী লীগের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে পারলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আরিফের।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

