ডায়াল সিলেট ডেস্ক: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল রাতে টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৭টি গ্রামে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। কয়েক ঘন্টা টানা ভারি বর্ষণে বিভিন্ন ছড়া (গাং) ফুঁসে উঠেছে। খালগুলোর দুইপাড় উপচে ঢলে ছড়ার দু’পাশের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি- বিজতলা তলিয়ে গেছে।
বুধবার (৫ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়ন এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ৭টি গ্রামের রাস্তাঘাটসহ ঘর-বাড়িগুলো পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলো হলো শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের কামারগাঁও, বেলতলী, চিড়িগাঁও, ডুবাগাঁও, সিক্কা, উদনারপাড়, এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের বিলাসছড়া (বটেরতল)। এদিকে, বন্যাকে কেন্দ্র করে পথে পথে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন ধরণের ছোট বড় জাল বিছিয়ে মাছ শিকার করতে দেখা যায় স্থানীয়দের।
আশিদ্রোন ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার বাসিন্দা, কুঞ্জবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ একরামুল কবীর বলেন, সিন্দুরখান ইউনিয়নস্থ লাংলিয়া ছড়ার (গাং) যে সকল স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হতো সেই স্থানগুলো পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে এবং রাতে ভারি বৃষ্টি হওয়ার কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিন্দুরখান ইউনিয়নের কামারগাঁও, বেলতলী, চিড়িগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রামে আকস্মিক বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে এবং বাড়ি ঘরে পানি ওঠে মানুষের দুর্ভোগ সৃৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষিণ কামারগাঁও এলাকার কৃষক ইছার উদ্দিন (৭০) বলেন, রাতে ভারি বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ রাত ৪টার দিকে দেখি আমার বাড়ির উঠান প্লাবিত হয়ে ঘর পানি ঢুকছে। এতে আমার ফসলি ক্ষেতের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে এবং আমার পুকুরের সসব মাছ চলে গেছে। কয়েকদিন আগে আমি ২ হাজার টাকার মাছের পোনা পুকুরে ছেড়েছি। আমার অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেলো। তিনি বলেন বেলা ১২টার দিকে পানি কমলেও আমার ফসলি ক্ষেত এবং পুকুরের মাছের ক্ষতি হয়ে গেলো।
বেলতলী এলাকার চাষী ইদ্রিস মিয়া (৬৫) বলেন, হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল আর প্রবল বর্ষণে বন্যায় আমার বিশাল ক্ষতি হয়ে গেলো। পানির শা শা শব্দে রাত ৩টার দিকে আমার ঘুম ভাঙ্গে। বিছনা থেকে ওঠে দেখি আমার ঘরের ফ্লোরে পানি আর পানি। বাইরে গিয়ে দিকে শুধু পানি আর পাানি। এ বন্যায় আমার পুকুরের মাছ এবং ফসলের ব্যাপক লোকসান হয়ে গেছে।
চিড়িগাঁও এলাকার বাসিন্দা কৃষক এবাদুল্লাহ (৮০) বলেন, গতকাল রাতের আকস্মিক বন্যায় আমার বাড়িসহ আমার ৪ ভাইয়ে ঘরে পানি ওঠে। সবজিসহ অন্যান্য ফসলি ক্ষেতের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। আমার বাড়াড়ির অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে।
আশিদ্রোন ইউনিয়নের বিলাসের পাড় (বেলতলি) এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম বলোন, পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিতে আমার বাড়িঘরে পানি ঢুকে দুর্ভোগ সৃৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাড়ির ওঠান ভেঙ্গে পানির সাথে মাটি চলে গেছে। টিনের ঘর ও দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে। প্লাবিত গ্রামের মানুষের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ধানের জমি এবং সবজিসহ অন্যান্য ফসলের জন্যও এ বন্যাটি ক্ষতি বয়ে আনলো।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল সিন্দুুরখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াছিন আরাফাত রবিন বলেন, আমি প্লাবিত এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। মূলত ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে রাতে আকস্মিক বন্যায় আমার ইউনিয়নের কামারগাঁও, বেলতলী, চিড়িগাঁও প্লাবিত হয়। সকালে এসব এলাকা থেকে বন্যার পানি কমে গেলেও দুপুর থেকে সিক্কা, উদনারপাড় এবং ডুবাগাঁও এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে পানি। এর ফলে গ্রামবাসির বীজতলা নষ্ট হয়েছে। সবজি ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাছ চাষিদের মাছ পুকুর থেকে চলে গেছে। বিভিন্ন রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। ছড়ার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঢলে ভাঙ্গন সৃষ্টু হয়েছে। এ ব্যাপারে বুধবার বিকেল ৫টায় মুঠোফোনে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, আমি সকালে সরেজমিনে প্লাবিত এলাকায় গিয়েছি।
অনেক গ্রামে দুপুরের আগেই বন্যার পানি নেমে গেছে। এটা দীর্ঘস্থায়ী বন্যা বা কোনো সমস্যা নয়। আর যদি টানা ভারি বৃষ্টিপাত না হয় সবকিছু স্বাভাবিকভাব হয়ে যাবে। এ বন্যায় খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি কোনো পরিবার। তবে বেশি ক্ষতিস্ত
কেউ থাকলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার জন্য আমি স্থানীয় মেম্বারদের বলে আসছি। তিনি আরও বলেন, পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্থানে বন্যা এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ অনেক মানুষ ড্রেনের ব্যবস্থা না করেই বাড়িঘর বানিয়ে ফেলেন। মাটি ভরাট করে ড্রেনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। বালু উত্তোলনের কারণে ছড়া ও রাস্তাঘাট ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অবৈধ বালু চোরদের কারণেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষের। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের জেল জরিমানা করছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *