৬ দিন ধরে নজিরবিহীন বর্ষণ ও তার জেরে সৃষ্ট বন্যা-ভূমিধসে ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে উত্তর ভারত। গত চার দিনের ভারী বর্ষণ-বন্যা-ভূমিধসে ভারতের এই অংশের বিভিন্ন রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৪৫ জনের।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

ভারতের কেন্দ্রীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে হিমাচল রাজ্যে। উত্তর ভারতের হিমালয় পর্বতমালা ঘেঁষা এই রাজ্যটিতে গত কয়েক দিনে বর্ষণ-বন্যা-ভূমিধসে মারা গেছেন ৯১ জন। এছাড়া একই কারণে উত্তরপ্রদেশে ১৪ জন, উত্তরাখণ্ডে ১৬ জন, পাঞ্জাবে ১১ জন এবং হরিয়ানায় ১৬ জন মারা গেছেন।

রাজধানী নয়াদিল্লির অবস্থাও বেহাল। অতিবর্ষণজনিত কারণে যমুনা নদীর পানি উপচে পড়ে ঢুকে পড়েছে শহরের ভেতর। একই সময়ে প্রধান কয়েকটি পানি নিষ্কাশন নালা বা ড্রেনেজ ব্যবস্থার ধসে পড়ায় ব্যাপক পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যয়কর করে তুলেছে। বৃহস্পতিবার দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিন শিশুর। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেনার সাহায্য চেয়েছেন।

উত্তর ভারতের হিমালয় পর্বতমালা ঘেঁষা অপর রাজ্য উত্তরাখণ্ডে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি)। দপ্তরের উত্তরাখণ্ড শাখা কার্যালয়ের প্রধান বিক্রম সিংহ ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘রাজ্যের হরিদ্বার, পাউরি ও গাঢ়োয়ালে বৃষ্টির প্রভাব সব থেকে বেশি পড়তে পারে। ১৬ জুলাই রবিবার বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে পারে। মানুষকে আরও সতর্ক থাকতে হবে।’

বিক্রম সিংহ আরও জানান, বুধবার উত্তরাখণ্ডের রুরকিতে ৩০০ মিলিমিটার, হরিদ্বারের কাছে লাকসারে ২২০ মিলিমিটার এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে ২১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বুধবার রুদ্রপ্রয়াগে বৃষ্টি হয়েছে ১০০ মিলিমিটার।

গত ৮ জুলাই থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে উত্তর ও উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে। এর মধ্যে উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশে এখনই থামছেই না বৃষ্টি। আইএমডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ সুরেন্দ্র পাল দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, ‘বৃষ্টির তীব্রতা আগের থেকে কমেছে। তবে এখনও থামেনি। প্রবল বৃষ্টির কারণে ইতিমধ্যে মাটি এতটাই নরম হয়ে উঠেছে যে, তার পানিধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। সে কারণে বিশেষত পাহাড়ি এলাকাগুলোতে বন্যা এবং ধসের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে।’

গত ছয়দিনের বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে দিল্লির লালকেল্লা, রাজঘাট জলমগ্ন। পানি ঢুকেছে সুপ্রিম কোর্টেও। বন্যার কারণে ১৬ জুলাই রোববার পর্যন্ত বন্ধ দিল্লির সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজ্যসরকার। শুক্রবারও দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমডি।

মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়েও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে শহরে অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

বন্যাজনিত কারণে হিমাচলের লাহৌল, স্পিতিতে পাঁচ দিন আটকে থাকার পর বৃহস্পতিবার উদ্ধার করা হয়েছে ২৫৬ জন পর্যটককে। এছাড়া রাজ্যের সাংলা এবং কিন্নরে আটকে থাকা ১০০ জন পর্যটককে হেলিকপ্টারে করে তুলে আনা হয়েছে।

আইএমডির তথ্য অনুযায়ী, ১৭ জুলাই থেকে আবার মধ্যপ্রদেশে বৃষ্টি বাড়তে পারে। এত পূ্র্বাভাসে আইএমডি জানিয়েছে, ১৬ জুলাই উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর নিম্নচাপ শুরু হতে পারে। সেই সঙ্গে নতুন করে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে আগামী দিনে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, আনন্দবাজার

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *