সম্প্রতি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া বুয়েট শিক্ষার্থীদের কেউ ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে বা তাদের কেউ নাশকতার পরিকল্পনাকারী প্রমাণিত হলে, তাদের শাস্তি চায় বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

এ ছাড়া আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত থাকায় বুয়েটের আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটু ফের ক্লাসে যোগ দিলে শিক্ষার্থীরা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার হুঁশিয়ারি দেন তারা। তারা বলেছেন, ‘এমন কুখ্যাত একজন ব্যক্তির সঙ্গে ক্লাস ও ক্যাম্পাস শেয়ার করতে আমরা কোনোভাবেই রাজি নই।’

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে বুয়েটের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। এর আগে শিক্ষার্থীরা একই স্থানে দাঁড়িয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে ফের শপথ পাঠ করেন।

এসময় তারা সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেয়ারও শপথ নেন।

এই শপথ পাঠ শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। তিনজন শিক্ষার্থী ধাপে ধাপে লিখিত বক্তব্যটি পাঠ করেন। তবে কেউই তাদের নাম প্রকাশ করেননি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির চরমতম রূপ বারবার আঘাত হেনেছে আমাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে। ২০০২ সালে থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল ছাত্ররাজনীতির অন্ধকার অধ্যায় তার ভয়ঙ্কর দাগ রেখে গেছে আমাদের এ ক্যাম্পাসে। কালের পরিক্রমায় নিজেরা আন্দোলন করে দাবি আদায় নিশ্চিত করে সব বাধা ডিঙিয়ে সকল শিক্ষার্থী একতাবদ্ধ হয়ে যখন সুস্থ সুন্দর একটি পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, তখনই আবারও বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরপেক্ষ মনোভাবকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল।

গত ৩০ জুলাই ২৪ জন বর্তমান শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নাশকতার পরিকল্পনাকারী সন্দেহে আটক হয়। পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়। এ বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীর শাসনব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে একটি সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার আশা করছি। যদি তারা প্রত্যেকেই দোষী প্রমাণিত হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই তাদের বিপক্ষে থাকবে। তবে যদি তাদের মধ্যে কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে নির্দোষরা যেন আর কোনোভাবে কোনো হয়রানির স্বীকার না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং বুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করব।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কোন সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না বা তারা ক্যাম্পাসে অন্য শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করছে কি না, এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। যদি তাদের এরূপ কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে। আর যদি তারা নির্দোষ হয়, তাহলে তারা যেন সুস্থ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে তার দাবি জানানো হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বুয়েট শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অভিযুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও লিখিত বক্তব্যে বলা হয়।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে, আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে দৃঢ় অবস্থান তা থেকে আমরা কোন অবস্থাতেই সরে আসব না। যেকোনো ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদ চর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, তা সে যে দলেরই হোক না কেন।

ইতোপূর্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীর ব্যাপারেও ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত কি না বা অন্য কাউকে প্রভাবিত করছে কি না, এই মর্মে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রশাসন থেকে তদোপরি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। সাম্প্রতিক এই ইস্যুগুলো নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতি।

এ ছাড়া অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া পেজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্ধৃত করে বিভিন্ন বক্তব্য প্রচার করেছে যা কোনো ভাবেই সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করে না বলে বিবৃতিতে বলা হয়। এরূপ অপপ্রচারকারী মিডিয়া বা ব্যক্তিবর্গ দ্বারা প্রভাবিত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান শিক্ষার্থীরা।

আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িত থাকায় বুয়েটের আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটুর ফের ক্লাসে যোগ দেয়ার চেষ্টার ঘটনায় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গতকালের অবস্থান কর্মসূচিতে আমরা আবরার ভাই হত্যার তদন্তে অসহযোগ এবং অন্যান্য র‌্যাগিং ঘটনার ইস্যুতে বুয়েটের আজীবন বহিষ্কৃত ছাত্র আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসে ফেরার বিপরীতে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। এরকম কুখ্যাত একজন ব্যক্তির সঙ্গে ক্লাস এবং ক্যাম্পাস শেয়ার করতে আমরা কোনোভাবেই রাজি নই। কর্তৃপক্ষকে আজকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না আসলে আমরা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দ্বিধা করব না।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *