‘আপনিই মারার চেষ্টা করেছেন’

প্রকাশিত: ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০২০

‘আপনিই মারার চেষ্টা করেছেন’

ডায়ালসিলেট ডেস্ক::২১শে আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার তিনি মূল টার্গেট ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনের সেই হামলার ভয়াবহতার মাঝেও তার বেঁচে যাওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে বলেই মনে করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এর আগেও আমি বহুবার বিভিন্ন হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু এইরকম একটা ভয়াবহ হামলায় বেঁচে যাওয়া নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন কিছু কাজ রেখে দিয়েছেন। সেটা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কাজ করে যেতে পারব, আল্লাহ্‌ সেই সুযোগ দেবেন আমি সেইটুকুই চাই। সেই কাজটুকু আমরা করে যাবো। দেশটাকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।

শুক্রবার ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত বিএনপি সরকার ‘দুর্নীতির বিষবৃক্ষ রোপণ’ করে গেছে এবং বাংলাদেশ এখন তার ফল ভোগ করছে।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি’র কাছে ক্ষমতা হলো দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা কামানোর উপায় এবং দেশ এখন তাদের পাঁচ বছরের দুঃশাসনকালে রোপণ করা বিষবৃক্ষের মূল্য দিচ্ছে।’ তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে গ্রেনেড হামলার আলামত নষ্ট করাসহ পরবর্তী সময়ে মামলা তদন্তের নামে ‘জজ মিয়া নাটক’ তৈরির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ওই সময়কার এই বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আমরা পার্লামেন্টের সদস্য, পার্লামেন্টের অনেক সদস্যই এই গ্রেনেড হামলায় আহত। আমরা এটার ওপর আলোচনা করতে চাইলাম।
একটা রেজ্যুলেশন নিতে চাইলাম আমরা অপজিশনে থেকে। খালেদা জিয়া কিন্তু সেটা করতে দেননি বা এটা আলোচনা করতেও দেননি। একটি দেশে এ রকম ঘটনা গেছে, আমি বিরোধী দলের নেতা। আমার ওপর এ রকম গ্রেনেড হামলা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দল, যে দল দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই দলের একটা সভায় এ রকম একটা গ্রেনেড হামলা আর পার্লামেন্টে যিনি সংসদ নেতা, লিডার অব দ্য হাউজ প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, ওনাকে আবার কে মারবে? এখন তো বলতে হয় যে আপনিই তো মারবেন! চেষ্টা করেছিলেন, ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, সেদিন এ রকম তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে আমাদেরকে কোনো কথা বলতে দেয়নি এই হামলা সম্পর্কে। অথচ আমাদের নেতাকর্মীরা, পার্লামেন্ট মেম্বাররা আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। কিন্তু এটা নিয়ে সংসদে কথা বলার অধিকারটুকু আমাদের ছিল না। আমাদের কাউকে মাইক দেয়নি, কাউকে আলোচনা করতে দেয়নি। এর থেকে কী প্রমাণ হয়? তারা যদি সরাসরি জড়িত না থাকবে, তাহলে কি এ রকমভাবে বাধা দিত? তিনি বলেন, আমি জানি না, আল্লাহ কেন বাঁচিয়ে রেখেছেন? এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু যেন করতে পারি, সেজন্যই হয়তো বাঁচিয়ে রেখেছেন। নইলে এ রকম অবস্থা থেকে বেঁচে আসা এটা অত্যন্ত কষ্টকর। সেদিনের সেই হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, যখন এই গ্রেনেড হামলাটা হলো, একটা সভ্য দেশে হলে তো সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ছুটে আসতো, অন্য সবাই ছুটে আসতো। আহতদের উদ্ধার করতে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সবাই এগিয়ে আসতো। তারা কী করলো? বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বন্ধ, সেখানে কোনো রোগী যেতে পারেনি, চিকিৎসা নিতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বিএনপি’র যেসব ডাক্তার, কেউ সেখানে উপস্থিত নেই! যাদের ডিউটি ছিল, তারাও নেই! কারণ রোগীদের চিকিৎসা করবে না। আমাদের যারা ডাক্তার ছিল, তারা ছুটে গিয়েছিল এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। ঢাকা শহরে কত শত হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে, সেটা বোধ হয় ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর আমি জানতে পারি। কারণ সারা ঢাকা শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, সেদিন যারা ছুটে এসে আহতদের মেডিকেলে নিয়ে যেতে শুরু করে, পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে। সাহায্য করার বদলে উল্টো লাঠিচার্জ করলো, টিয়ার গ্যাস মারলো কেন? জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন এটা কি তারা কখনো চিন্তা করেছে? কেন সেই সময় আহতদের চিকিৎসার জন্য তাড়াতাড়ি হাসপাতালে না নিয়ে সেখানে টিয়ার গ্যাস মারা হলো? লাঠিচার্জ করা হলো? এমনকি অনেকে নিজেদের আপনজনকে তুলতে গেছে, পুলিশ তাদের লাথি মেরে সরিয়ে দিয়েছে, কেন তারা সাহায্য করতে এসেছে! ওই হামলাকারীরা যেন নির্বিঘ্নে ওই জায়গা ত্যাগ করতে পারে, সেই সুযোগটা তৈরি করার জন্যই তারা এটা করেছিল। ফলে সরকারের মদত না থাকলে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এভাবে হতে পারে না। তাদের ধারণা ছিল, আমি মারা গেছি। যখন শুনলো আমি মারা যাইনি, ওই রাতেই চারজনকে দেশ থেকে পালাতে সুযোগ করে দেয়। আসলে যাদের খুন করারই অভ্যাস, এরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। এরা বিশ্বাস করে, ক্ষমতা হচ্ছে দুর্নীতি করে টাকা বানানোর উপায়। এবং তারা যে দুর্নীতি করে গেছে, দুর্নীতির যে বিষবৃক্ষ রচনা করে গেছে সারা বাংলাদেশে, আজ তার কুফল বাংলাদেশ ভোগ করছে। আমরা সরকারে আসার পরে এক এক করে সেগুলো ধরছি, উদ্ঘাটন করছি। গ্রেনেড হামলায় নিহতদের পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দলের যেসব নেতাকর্মী মারা গেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, আমি যখন আহ্বান করেছি যে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, ত্রাণ দিতে হবে আমাদের আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আর কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন তিনি। স্মরণসভায় সশরীরে উপস্থিত হতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তবে শারীরিকভাবে উপস্থিত হতে না পারলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যুক্ত হতে পারাকেও সরকারের সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। এর পেছনে নিজের সন্তান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আজ খুব দুঃখ হচ্ছে যে, আমি আপনাদের মাঝে এই জায়গায় আসতে পারলাম না। কিন্তু আজ ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বা জুমের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আমি জয়কে ফোন করেছিলাম, তাকে ধন্যবাদও দিয়েছি। বলেছি, তুমি যদি ডিজিটাল পদ্ধতি না করে দিতে, তাহলে আজ এভাবে আমরা কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পারতাম না, সব স্থবির হয়ে থাকতো। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করবো- এটাই আমাদের অঙ্গীকার। আজকের দিনে আমরা সেই অঙ্গীকারটাই করছি। জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তুলবেন, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা এবং আমরা তা করবো।

0Shares