ডায়ালসিলেট ডেস্ক::ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটে মাস্টার্সে পড়ছেন আফরিন। কোভিড-১৯ মহামারির শুরুতে বাড়িতে গেলেও মাস দু’য়েক পরে বুঝতে পারেন বাড়িতে থাকা তার জন্য কষ্টকর। কারণ পরিবারের সদস্যদের আচরণে মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আফরিন ক্যাম্পাসে ফেরাটাকে নিজের মুক্তি হিসেবে দেখেন। শুধু আফরিন নয়, কোভিড-১৯ মহামারিতে দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকায় পারিবারিক ও মানসিক চাপ বাড়ছে তরুণদের ওপর। পরিবারের আর্থিক সংকটে নিজে ভূমিকা রাখতে না পারা, পারিবারিক কলহ, সামাজিক চাপ, সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর অনিশ্চয়তা- সব মিলিয়ে এক কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক সংকট যেখানে তৈরি হয়, তখন সেখানে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এক্ষেত্রে ধৈর্যসহকারে সংকট মোকাবিলা করা উচিত। পরিবারের কার কতটুকু অবদান তা বিবেচনায় না নিয়ে সংকট মোকাবিলায় পথ খোঁজা উচিত। অন্যদিকে এমন পরিস্থিতে সরকারের উচিত তরুণ প্রজন্মকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেয়া। এছাড়াও আউটসোর্সিংয়ে এ বিশাল জনশক্তিকে কাজে লাগানো গেলে তাদের হতাশা কেটে যাবে। করোনা মহামারি শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল বন্ধ ঘোষণা করে। বাধ্য হয়ে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গ্রামে চলে যান। যারা শহরে থাকার চেষ্টা করেছেন তারাও কিছুদিন পরই গ্রামে ফিরতে বাধ্য হন। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ায় তাদের ওপর নানামুখী চাপ বাড়ছে। চাকরির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার হতাশা তৈরি হয়েছে। কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা। পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কা। এদিকে অনেক এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার সংকটের মুখে পড়েছে। পরিবারের সংকটে কিছু করতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন তারা। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ভার্চ্যুয়াল ক্লাস হচ্ছে তাতেও সমভাবে অংশ নিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। যাদের স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সুবিধা নেই তারা ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। ক্লাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের হতাশা তৈরি হচ্ছে। একইভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে সংকটে পড়েছেন। করোনাকালে ভার্চ্যুয়াল ক্লাস পরীক্ষা হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি আদায় করছে নিয়মিত। করোনায় সংকটে পড়া অনেক পরিবার সন্তানের টিউশন ফি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীটির ওপর বড় ধরনের মানসিক চাপ পড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের ছাত্র মুস্তাকিম রহমান পিতৃহীন সংসারে সাদ্যমতো আর্থিক যোগান দিতেন টিউশনি করে। কিন্তু এখন উল্টো পরিবারই তাকে দেখতে হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে থাকায় সামাজিকভাবেও কটুকথার শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতে নানাবিধও চাপ মাথায় ভিড়ছে। উপায় খুঁজতে ক্যাম্পাসে ফিরতে চান মুস্তাকিম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. নুরুজ্জামানও একই সমস্যার সম্মুক্ষীন। তিনি বলেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তাই কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার আগে টিউশনি করে পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দিতাম। কিন্তু এখন কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে। পরিবারের আর্থিক সংকটে কোনো সাপোর্ট দিতে পারছি না, বন্যার কারণে চাষাবাদেও কোন ভূমিকা রাখতে পারছি না। অন্যদিকে চাকরিতে প্রবেশের জন্য পরিবার থেকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে। আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পরিবারের কাছে গৌণ। এখনই ছোটখাটো চাকরিতে প্রবেশের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এনামুল হক বলেন, আগে আমি টিউশনি করে পরিবারকে আর্থিক সাপোর্ট দিতাম। কিন্তু করোনার কারণে নিজেই বাড়িতে বসে আছি দীর্ঘদিন। পরিবারকে সাপোর্ট দিতে পারছি না। পরিবারের আর্থিক সংকট সামনে থেকে দেখে নিজে খুব অনুতপ্ত হচ্ছি। কিন্তু কিছুইতো করার নেই। আবার দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার কারণে এলাকায় নানাবিধ তীর্যক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *