ডায়াল সিলেট ডেস্ক :: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন তার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শরীরে টিআইপিএস পদ্ধতি স্থাপন করা হয়েছে। অত্যন্ত সফলভাবে এখন পর্যন্ত টিআইপিএস কাজ করছে। যার জন্য তিনি অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন। ফলে আজ তিনি বাসায় আসতে পেরছেন। বাড়ি নিয়ে আসা হলেও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে।

 

বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এসময় খালেদা জিয়ার দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি জানিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিও জানান ডা. জাহিদ। এর আগে এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে পাঁচ মাস পর গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এসময় গাড়ি থেকে নেমে হাসিমুখে বাসার গেটে অপেক্ষমাণ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

 

বিকেল পৌনে ৫টায় হাসপাতাল ছাড়েন বেগম জিয়া। সঙ্গে ছিলেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ছাড়াও নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা। হুইল চেয়ারে করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গৃহপরিচারিকাদের সহযোগিতায় গাড়িতে ওঠেন বিএনপি নেত্রী। খালেদা জিয়ার গাড়ি হাসপাতাল থেকে বের হতে গেলে নেতাকর্মীদের ভিড়ে তা প্রধান ফটকেই আটকে যায়। সেখান থেকে বাসভবন ফিরোজায় ফেরার পুরো পথেই নেতাকর্মীর ভিড় ঠেলে বেগম জিয়ার গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা। এসময় কর্মীরা স্লোগানে মুখর করে রাখেন পুরো যাত্রাপথ।

 

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফিরোজায় প্রবেশ করে বিএনপি নেত্রীর গাড়ি। এসময় খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার ও তার ছেলেসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গাড়ি থেকে নেমেই বেগম জিয়া জড়িয়ে ধরেন নাতনিকে। এরপর আবারও হুইল চেয়ারে করে বাসার ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

 

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা ও লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। এছাড়া আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। এরই মধ্যে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়।

 

সবশেষ গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে আবারও রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে তিনি এ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সপ্তমবার বর্ধিত মুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। এর আগেই তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়।

 

এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অষ্টমবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শর্ত দুটি হলো- খালেদা জিয়া আগের মতোই ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।

 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায়ের পর তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখা হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার সাজা আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।

 

একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন একই আদালত।

 

২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এরপর থেকে মুক্তির মেয়াদ বাড়তে থাকায় তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।

 

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *